Latest News
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Home / শিল্প ও সাহিত্য / অযত্ন অবহেলায় ইসলামী রেনেসাঁর কবি ফররুখ আহমেদের জন্মভিটে

অযত্ন অবহেলায় ইসলামী রেনেসাঁর কবি ফররুখ আহমেদের জন্মভিটে

মিলন কান্তি দাস
ইসলামী রেনেসাঁর কবি ফররুখ আহমেদের জন্মভিটে আজ চরম অযত্ন আর অবহেলার স্মাক্ষর বহন করছে। এ বছর কবির জন্মশতবর্ষ হয়তো একদল সাহিত্য প্রেমি নানা আয়োজনে ঢাকায় পালন করবে । তারা হয়তো একবারও গিয়ে দেখবেন না এক সময়ের যশোর জেলা (বর্তমান মাগুরা জেলা) শ্রীপুর উপজেলার মাঝাইল গ্রামের তাঁর জন্মভূমির আজ কি করুণ দশা। ইসলামী পুনরজাগরণের এই মহান কবির জন্মভিটা দেখতে গিয়ে হতাশা আর বেদনা ভরা হৃদয় নিয়ে ফিরে এসেছি । ইসলামী রেনেসাঁর এই অকুতোভয় সৈনিক ১৯১৮ সালের ১০ জুন পুলিশ কর্মকর্তা সৈয়দ হাতেম আলী খান সাহেব এবং রওশন আখতারের ঘরে জন্ম নেন । তাঁর অন্য ভাই বোনরা হচ্ছেন সৈয়দ মোস্তাক আহম্মেদ, সৈয়দ মারুফ আহম্মদে, সৈয়দ সিদ্দিক আহমেদ, সৈয়দ মুশিউর আহমেদ এবং সৈয়দা সরফুয়ারা। খুলনা জেলা স্কুল, কলকাতার রিপন কলেজ এবং স্কটিশ চার্চ থেকে দর্শন ও ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেন । শিক্ষা জীবনে বামপন্থী রাজনীতিতে যুক্ত হলেও চল্লিশের দশকে রাজনৈতিক বিশ্বাস পরিবর্তন করে পাকিস্তান আন্দোলনে সমর্থন করেন । ১৯৪২ সালের নভেম্বর মাসে আপন খালাতো বোন সৈয়দা তৈয়বা খাতুন লিলিকে বিয়ে করে সংসার জীবন শুরু করেন। সংসার জীবনে তিনি ১১ সন্তানের জনকে ছিলেন । ছেলে-মেয়ে হচ্ছে সৈয়দা শামারুখ বানু, সৈয়দা লালারুখ বানু, সৈয়দ আবদুল্লাহল মাহমুদ, সৈয়দ আবদুল্লাহেল মাসুদ, সৈয়দ মনজুরে এলাহি, সৈয়দা ইয়াসমিন বানু, সৈয়দ মুহম্মদ আখতারুজ্জামান (আহমদ আখতার ), সৈয়দ মুহম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান, সৈয়দ মুখলিসুর রহমান, সৈয়দ খলিলুর রহমান এবং মুহম্মদ আবদুহু। কর্মজীবনে আইজি প্রিজন অফিস, সিভিল সাপ্লাই, জলপাইগুড়ির একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন, ১৯৪৫ সালে “মাসিক মোহম্মদি” পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন ।

দেশ বিভাগের পর কোলকাতা থেকে ঢাকায় ফিরে এসে ঢাকা বেতারে অনিয়মিত স্টাফ হিসেবে যোগদান করেন পরে নিয়মিত হয়ে ৭২ সাল পর্যন্ত বেতারেই চাকুরি করেন। এই মহান কবির জন্মভিটা দেখতে গিয়েছিলাম স্বপরিবারে। গিয়ে যা দেখলাম তাতে কাকে দোষ দেব বুঝতে পারছিলাম না । এই অবহেলার দায়ভার কি স্থানীয় প্রশাসনের না সরকারের অথবা সাহিত্য প্রেমিদের এ প্রশ্নটি ঘুরপাক খাচ্ছিল মাথার মধ্যে । বাড়ির প্রবেশ পথে জেলা পরিষদ একটি তোরণ করে তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে অপরদিকে কবির জন্মভিটাতে দারিয়ে থাকা ভগ্নপ্রায় ঘরটি সংরক্ষণের কোন চিহ্ন চোখে পড়েনি। কবির ভাইয়ের ছেলে সৈয়দ রিপন আহমেদ একটি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেছে পরিবারের ঐতিহ্য ধরে রাখার তাগিদে । সেখানে কথা হয় কবির ভ্রাতৃবধূ ফাতেমা বেগমের সাথে । তাঁর আথিথেয়তা আমাদেরকে মুগ্ধ করেছে । তিনি জানান, কবিদের এই বাড়িটি এক সময় পালদের ছিল । তাঁরা ছিল মূলত কোলকাতার যাদবপুরের বাসিন্দা । ষোল পুরুষ আগে তাঁরা পালদের সাথে জমি বদল করে এখানে চলে আসেন । তিনি আক্ষেপ করে বলেন আপনাদের মতো কিছু লোক ঘুরতে আসে তারা ছবি তুলে নিয়ে যায় কিন্তু এই মহান কবির স্মৃতি রক্ষায় কেউই এগিয়ে আসে না । তিনি সরকারের কাছে ইসলামি রেনেসাঁর কবি ফররুখ আহমেদের জন্মভিটেয় একটি স্মৃতি সংরক্ষণাগার নির্মানের জোর দাবি জানান ।
সেখানে দেখা হয় কবির স্নেহভাজন আবদুল খালেকের সাথে। তিনি কবির গ্রামে আসার ছোটছোট স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে বলেন, একবার কবি একটি ছাগল (খাসি) কিনে আনেন সিদ্ধান্ত হয় রাস্তার পাশের বাগানে বসে রান্না এবং খাওয়া হবে । এই আয়োজনে তাঁর দায়িত্ব ছিল খাবার জন্য প্লেট হিসেবে কলাপাতা জোগাড় করার । বৃদ্ধ আবদুল খালেক সেদিনের কথা বলতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পরেন । আমার দশ বছরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া মেয়ে সৌমির জিজ্ঞাসা ছি-বাবা তুমি বলেছিলে বিশাল কবি কিন্তু তাঁর এমন ভাঙ্গা ঘর কেন? সন্তানের সেই প্রশ্নের উত্তর আমার জানা ছিল না । স্থানীয় প্রশাসন, সরকার বা সাহিত্যপ্রেমি আপনারা কি আমার ছোট্ট মেয়েটির প্রশ্নের জবাব দিতে পারবেন ? যদি দিতে পারেন তবে কিছু বলার নেই। আর যদি না পারেন তবে আপনাদের সবার কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি ইসলামি রেনেসাঁর এই মহান কবির জন্মভিটা সংরক্ষণের । (লেখক : সাংবাদিক ও শিক্ষক)