স্টাফ রিপোর্টার :
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়েই পুলিশের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতো ঝালকাঠির মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের জেলা ব্যবস্থাপকের কাছে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর নাম ভাঙিয়ে দুইলাখ টাকা চাঁদাদাবিকারী সাবেক ছাত্রদল নেতা ইয়াসিন ভূঁইয়া। স্ত্রী ইসরাত জাহানের দায়ের করা মামলায় গত বছরের ২৯ মার্চ ইয়াসিনের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ঝালকাঠির আদালত। টাউন পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক মো. বশির উদ্দিনের সঙ্গে ইয়াসিনের ছিল ঘনিষ্টতা। এ কারণেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকা সত্ত্বেও পুলিশ কর্মকর্তার সহযোগিতায় মেঘনা ডিপোতে গিয়ে জেলা ব্যবস্থাপকের কাছে চাঁদাদাবি করে ইয়াসিন। পুলিশ জানিয়েছে, ইয়াসিন এখন ঢাকায় রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শহরের শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম (পুরনো স্টেডিয়াম) সংলগ্ন মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড থেকে একটি ব্লু রঙের প্রাইভেট কার ভাড়া করে মাত্র ১৫০ গজ দূরে মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডে যান ইয়াসিন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন টাউন পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক মো. বশির উদ্দিন ও কনস্টেবল সমির। প্রাইভেট কারটি চালিয়ে যান মো. ফয়সাল। ডিপোর গেটে গিয়ে জেলা ব্যবস্থাপককে ০১৭১১৩২৮৮৬০ নম্বর থেকে শিল্পমন্ত্রীর লোক পরিচয় দিয়ে ফোন দেন ইয়াসিন। জেলা ব্যবস্থাপক বলার পরে নিরাপত্ত প্রহরী হারুন মাঝি প্রধান গেট খুলে দেন। এসময় ব্লু রঙের প্রাইভেট কার থেকে নামেন ইয়াসিন, পুলিশের উপপরিদর্শক মো. বশির উদ্দিন ও কনস্টেবল সমির। পেস্ট রঙের একটি শপিং ব্যাগে উপহার সামগ্রী গাড়ি থেকে বের করেন ইয়াসিন। ব্যাগটি মেঘনা ডিপোর স্টাফ জাহাঙ্গীর খানের কাছে দেয় ইয়াসিন। ব্যাগটি নিয়ে তার সঙ্গে দ্বিতীয় তলায় যেতে বলা হয়।
ডিপোর সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, রবিবার বেলা ১২টা ৪৮ মিনিটে ইয়াসিন কালো একটি সানগ্লাস পড়ে দ্বিতীয় তলা ওঠে। একটু সামনে হেঁটে পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করে কাউকে কল দিচ্ছে। ইয়াসিনের পেছনে পেছনে আসেন উপপরিদর্শক মো. বশির উদ্দিন। তাঁর হাতে ওয়াকিটকি ও একটি কাগজের ফাইল রয়েছে। এর পরে আসেন ডিপোর স্টাফ জাহাঙ্গীর। জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে উপহার সামগ্রির ব্যাগটি চেয়ে নেয় ইয়াসিন। পরে আসেন কনস্টেবল সমির। সমিরকে হাত দিয়ে ইশারা দিয়ে অন্য একটি কক্ষে যেতে বলেন উপপরিদর্শক বশির। এর পর ইয়াসিন ও বশির ঢুকে পড়েন ডিপোর জেলা ব্যবস্থাপকের কক্ষে। নিচে ব্লু রঙের প্রাইভেট কারের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন চালক ফয়সাল।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ডিপো ব্যবস্থাপক মো. মাহবুবর রহমানকে একটি শপিংব্যাগে উপহার সামগ্রী তুলে দেন ইয়াসিন। এই উপহার শিল্পমন্ত্রী তাঁর জন্য পাঠিয়েছেন বলে জানানো হয়। এসময় মুঠোফোনে ইয়াসিন একজনের কাছে কল দিয়ে ডিপো ব্যবস্থাপককে শিল্পমন্ত্রী কথা বলবেন বলে ধরিয়ে দেন। এর পর ফোন কেটে দিলে ইয়াসিন শিল্পমন্ত্রীর কথা বলে ডিপো ব্যবস্থাপকের কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করেন। ডিপো ব্যবস্থাপকের সন্দেহ হলে তিনি টাকা দিতে রাজি হননি। বাইরে গিয়ে তিনি থানায় ফোন করেন। থানা থেকে এসআই মিঠুন ডিপোতে যায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ইয়াসিন গাড়ি করে পালিয়ে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিপোর কর্মচারীরা জানান, ব্লু রঙের প্রাইভেট কারটি অনেকক্ষণ ধরে ডিপোর সামনে ছিল। পুলিশ আসলেও প্রাইভেট কারটি জব্দ করেনি। ব্লু রঙের প্রাইভেট কারটি এখন কোথায় রয়েছে? ওই গাড়ির চালকের অবস্থান সম্পর্কেও পুলিশের কোন তৎপরতা নেই কেন?।
খোঁজ নিয়ে যানা যায়, ঘটনার পর থেকে মাইক্রোবাস স্ট্যান্ডে ব্লু রঙের ওই প্রাইভেট কারটি দেখা যাচ্ছে না। চালক ফয়সালও খুব কম আসে মাইক্রোবাস সমিতির কার্যালয়ে। কিন্তু পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করেনি। প্রাইভেট কারটিও জব্দ করেনি।
এদিকে ঘটনার পর থেকে ইয়াসিন ভূঁইয়া গাঢাকা দিয়েছেন। তাকে আসামী করে মামলাও হয়েছে। তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুই পুলিশকে আসামী করা হয়নি। শুধুমাত্র পুলিশ সুপারের কাছে ডিপো ব্যবস্থাপকের দেওয়া অভিযোগে ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম রয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঝালকাঠি থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আবুল কালাম বলেন, প্রাইভেট কারটি মালিকের জিম্মায় রয়েছে। আসামী ইয়াসিন ঢাকা রয়েছে বলে আমাদের কাছে খবর রয়েছে। তাকে গ্রোপ্তরের চেষ্টা চলছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ডিপো ব্যবস্থাপকের কাছ থেকে সিডি করে আনা হবে।