ডেস্ক রিপোর্ট : দশম জাতীয় সংসদের ২০তম অধিবেশন আজ রোববার বিকাল ৫টায় শুরু হচ্ছে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন বসবে। এর আগে তার সভাপতিত্বে কার্য-উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে অধিবেশনের মেয়াদ নির্ধারণ করা হবে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদের (১) দফায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ২১ মার্চ এ অধিবেশন আহবান করেন। বর্তমান সরকারের মেয়াদের শেষ বছরের বাজেট-পূর্ববর্তী অধিবেশন এটি। এ অধিবেশন খুবই সংক্ষিপ্ত হবে। তবে এ অধিবেশনেই আসছে সংবিধানের সপ্তদশ সংশোধনী বিল। এ বিলে সংরক্ষিত আসনে নারীদের নির্বাচনের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও থাকছে সংরক্ষিত আসন।
সংবিধান অনুযায়ী, ৩৫০ জন সংসদ সদস্য (এমপি) নিয়ে সংসদ গঠিত হয়। দুই ধরনের নির্বাচনী ব্যবস্থার মাধ্যমে সদস্যরা নির্বাচিত হন। এর মধ্যে একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকাগুলো থেকে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ৩০০ জন ও সংসদের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের পদ্ধতিতে ৫০ জন সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সংবিধানের ৬৫(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বর্তমানে থাকা ৫০ জন সংরক্ষিত নারী সদস্যের মেয়াদ চলতি সংসদেই শেষ হচ্ছে। ওই অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে, ‘সংবিধান (চতুর্দশ সংশোধন) আইন-২০০৪ প্রবর্তনকালে বিদ্যমান সংসদের অব্যবহিত পরবর্তী সংসদের প্রথম বৈঠকের তারিখ হইতে শুরু করিয়া ১০ বৎসর কাল অতিবাহিত হইবার অব্যবহিত পরবর্তীকালে সংসদ ভাঙ্গিয়া না যাওয়া পর্যন্ত (৫০টি আসন) কেবল মহিলা-সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত থাকিবে এবং তাঁহারা আইনানুযায়ী পূর্বোক্ত সদস্যদের দ্বারা সংসদে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির ভিত্তিতে একক হস্তান্তরযোগ্য ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হইবেন। তবে শর্ত থাকে যে, এই দফার কোনো কিছুই এই অনুচ্ছেদের (২) দফার অধীন কোনো আসনে কোনো মহিলার নির্বাচন নিবৃত্ত করিবে না।’
২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদে সংবিধান সংশোধন করে সংরক্ষিত নারী সদস্যের ৪৫টি আসন সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আনুপাতিক হারে বণ্টনের ব্যবস্থা করা হয়। তখন এর মেয়াদকাল নির্ধারণ করা হয়েছিল পরবর্তী সংসদের (নবম সংসদ) প্রথম বৈঠক থেকে ১০ বছর। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর। আর প্রথম অধিবেশন বসে ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি। সেই হিসাবে সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্যের মেয়াদ ২০১৯ সালের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নারী সদস্যদের সংখ্যা ৪৫ থেকে ৫০-এ উত্তীর্ণ করা হয়। কিন্তু এর মেয়াদ বাড়ানো হয়নি। ফলে এখনই সংশোধনী না আনলে আগামী একাদশ সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন নিয়ে ঝামেলা পোহাতে হবে। এই ঝামেলা এড়াতেই সপ্তদশ সংশোধনী আনা হয়েছে। মন্ত্রিসভায় উত্থাপিত সংবিধান (সপ্তদশ সংশোধন) আইনের খসড়ায় সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাবও করা হয়েছে। এবারের অধিবেশন খুবই সংক্ষিপ্ত হবে বলে জানান চিফ হুইপ আসম ফিরোজ। যুগান্তরকে তিনি বলেন, এরপর যেহেতু বাজেট অধিবেশন তাই সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় অধিবেশনটি বসছে। আগামী ১৫ এপ্রিল রাষ্ট্রপতির দ্বিতীয় মেয়াদের শপথ অনুষ্ঠান। এরপর ১৬ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বাইরে যাওয়ার কথা রয়েছে। কাজেই ধারণা করা হচ্ছে রোববার শুরু হয়ে বৃহস্পতিবার ১২ এপ্রিল শেষ হবে এ অধিবেশন।
২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯তম অধিবেশন শেষ হয়। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় এক অধিবেশন শেষ হওয়ার ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে পরবর্তী অধিবেশন বসার নিয়ম রয়েছে। ৭ জানুয়ারি শুরু হওয়া ১৯তম অধিবেশন ছিল বছরের প্রথম অধিবেশন। সংসদের প্রথা ও সংবিধান অনুযায়ী অধিবেশনের প্রথম কার্যদিবসে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ভাষণ দেন। ভাষণে আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর সরকার ও বিরোধী দলের মোট ২৩৩ জন সংসদ সদস্য ৬৪ ঘণ্টা ৯ মিনিট আলোচনা করেন। আলোচনা শেষে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সর্বসম্মতভাবে ধন্যবাদ প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। (সূত্র: যুগান্তর)