ডেস্ক রিপোর্ট : ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে শিলাবৃষ্টি হয়েছে, যাতে অন্তত চারজনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার রাজধানীর বাইরে সিলেট, ঝিনাইদহ, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, মাগুরা, রাজশাহী ও মেহেরপুরে ঝড়ের সঙ্গে বজ্র ও শিলা বৃষ্টি হয়েছে। সিলেটে ঝড়ের মধ্যে টিনের চালের আঘাতে এক পথচারী নিহত এবং এক শিশু পুকুরে ডুবে মারা গেছে। শিলার আঘাতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে মাগুরা ও দিনাজপুরে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, শনিবারও দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঝড়ো হাওয়া ও শিলা বৃষ্টি হতে পারে। হালকা বৃষ্টিতে অস্বস্তিকর গরমের রেশ কাটলেও কয়েকদিন পর ফের তাপমাত্রা বাড়বে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।শুক্রবার বিকালে সাড়ে ৩টার পর থেকেই ঢাকায় বৈরী আবহাওয়া শুরু হয়। বিকাল ৪টার পরে আকাশ ঢেকে যায় কালো মেঘে। ঘণ্টারও বেশি সময় হালকা বৃষ্টির মধ্যে বজ্রঝড়ও বয়ে যায়।
বিকালে এই আবহাওয়ার মধ্যে পরীক্ষা কেন্দ্রে বিদ্যুৎ না থাকায় রূপালী ব্যাংকের একটি নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল হয়। অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশে পরীক্ষার্থীরা দেখতে পারছিলেন না বলে পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে বলে ব্যাংকার্স রিক্রুটমেন্ট কমিটির আহ্বায়ক মোশাররফ হোসেন খান জানিয়েছেন। ঝড়ের মধ্যে ঢাকার হাজারীবাগে একটি বড় গাছ ভেঙে পড়েছে বলে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে দায়িত্বরত কর্মকর্তা রাসেল সিকদার জানিয়েছেন।শুক্রবার বিকালে সিলেটে ঝড়ের সময় ওসমানীনগর উপজেলার দশহাল গ্রামে টিনের চাল পড়ে সাবিয়া বেগম নামের এক নারী এবং উমরপুর গ্রামে পানিতে ডুবে হাসান আহমদ নামের এক শিশুর মৃত্যু হয় বলে ওসমানীনগর থানার ওসি শহিদ উল্লাহ জানিয়েছেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ঝড়ে গাছপালা উপড়ে পড়েছে, টিনের চাল উড়ে গেছে অন্তত ৩০টি ঘরের। মাগুরা সদর উপজেলায় ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে শিলাবৃষ্টি হয় সন্ধ্যা ৬টার দিকে। এ সময় মাঠে কাজ করছিলেন ডহরসিংড়া গ্রামের আকরাম হোসেন (৩৫)। শিলার আঘাতে আহত হওয়ার পর তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন বলে সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান এনামুল কবীর রেজা জানিয়েছেন। এই উপজেলায় শিলার আঘাতে আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এছাড়া ঝড়ো হাওয়ায় বহু গাছপালাসহ অনেক কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে।এর আগে দুপুরে দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলায় শিলার আঘাতে মধ্যবয়সী এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। এই জেলায় শিলার আঘাতে আহত হয়েছেন আরও অন্তত ২০ জন। পার্বতীপুরের চণ্ডিপুর ইউনিয়নের চৈতাপাড়া গ্রামে ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে ঘরের টিনের চালা মেরামত করছিলেন সৈয়দ আলী (৫৫)। ‘এ সময় মাথায় শিলার আঘাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়,’ বলেছেন চণ্ডিপুর ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আব্দুস সালাম। দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক আবু নঈম মো. আবদুছ ছবুর গণমাধ্যমকে বলেন, দুপুরে হঠাৎ শুরু হওয়া ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে জেলার ১৩টি উপজেলার প্রায় সবকটিতে কমবেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে নবাবগঞ্জ উপজেলায়। জেলার গম, ভুট্টা, বোরো ক্ষেতসহ বিভিন্ন ফসল এবং আম ও লিচুর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কয়েকশ ঘর-বাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝড়ো হাওয়া ও শিলা বৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে অন্যান্য জেলাগুলোতেও। শিলার আঘাতে টিনের চালা ফুটো হয়েছে পাবনা ও নীলফামারীতে। যার ফলে টিনের বাজার আগুন লেগেছে। লোবে টিন কেনার জন্য ভিড় জমিয়েছে বাজারের টিনের দোকানগুলোতে। শুক্রবার সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায়ও বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। শনিবারের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে।
(সূত্র কালের কণ্ঠ অনলাইন)