কে এম সবুজ :
বদলির ১৪ দিন পরে এসে পেছনের তারিখে (ব্যাকডেটে) যোগদান করার অভিযোগ পাওয়া গেছে ঝালকাঠি হরচন্দ্র সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক হোসনেয়ারা আরজুর বিরুদ্ধে। আগের কর্মস্থলে আড়াই বছর ঠিকমতো ক্লাসে না আসা এই শিক্ষক সোমবার বিকেল সাড়ে চারটায় যোগদান করে আবারো ছুটি নিয়েছেন। সাত দিনের জন্য কর্মস্থল ত্যাগের জন্য যে ছুটির আবেদন করেছেন, তা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। প্রধান শিক্ষক পদ শূন্য থাকায় বিধি অনুযায়ী তিনি যোগদান করার পরই সয়ংক্রিয়ভাবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পাবেন। কিন্তু তিনি দায়িত্ব না নিয়েই ছুটির আবেদন করে বরিশালে চলে যান। আর যার কাছে তিনি আবেদন দিয়েছেন, সে ওই বিদ্যালয়ের সহকারী একজন শিক্ষক। বিদ্যালয়টিতে দুই বছর ধরে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন আবু সাঈদ মো. ফরিদ হোসেন নামে এক সহকারী শিক্ষক। এদিকে দায়িত্ব না নেওয়ায় বিধি লঙ্ঘন করে সহকারী শিক্ষকই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন বলে বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক জানিয়েছেন।
জানা যায়, প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিয়ে জটিলতার বিষয়ে খোঁজখবর নিতে সাংবাদিকরা অনুসন্ধান করে ঝালকাঠির সরকারি হরচন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি (বালক) উচ্চ বিদ্যালয় সম্পর্কে। সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহ করার খবর শুনে তড়িঘড়ি করে বরিশাল থেকে প্রাইভেটকারে এসে বিকেলে শিক্ষকদের ডেকে যোগদান করেন সহকারী প্রধান শিক্ষক হোসনেয়ারা আরজু। কিন্তু তিনি দায়িত্ব গ্রহণ না করেই বরিশাল চলে যান। ফলে আবারো জটিলতার সৃষ্টি হয়।
বিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টরা জানান, বিকেলে এসেই তিনি আগের কর্মস্থল ঝালকাঠি সরকারি (বালক) উচ্চ বিদ্যালয়ে যান। ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মারুফা বেগম, সরকারি হরচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবু সাঈদ মো. ফরিদ হোসেন ও হোসনেয়ারা আরজু গোপনে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে তিনি শিক্ষকদের ফোন করে হরচন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে আসতে বলেন। কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মচারী বিদ্যালয়ে আসলে তিনি গত ৫ এপ্রিল পেছনের তারিখ দেখিয়ে যোগদান করেন। পরে শিক্ষকদের অনুরোধে তিনি প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসে ছবি তোলেন। শিক্ষক ও কর্মচারীদের মধ্যে কয়েকজন ছবিগুলো তারিখ ও সময় উল্লেখসহ ফেসবুকে পোস্ট করেন। এরপরই দায়িত্ব গ্রহণের জন্য সিনিয়র এক শিক্ষক তাকে অনুরোধ জানান। কিন্তু তিনি দায়িত্ব গ্রহণ না করেই একটি ছুটির আবেদনপত্র আবু সাঈদ মো. ফরিদ হোসেনের কাছে দিয়ে বিকেল পৌঁনে ৫টার দিকে বরিশাল চলে যান। দায়িত্ব না নেওয়ায় ক্ষুব্দ হন কয়েকজন শিক্ষক। তবে বিধি অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে তিনিই এখন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। নিজে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হয়েও তিনি আবেদন করেন প্রধান শিক্ষকের কাছে, যে পদটি শূন্য। নিয়মানুযায়ী তিনি আবেদন করবেন বরিশাল বিভাগীয় উপপরিচালকের কাছে। অথচ নিয়ম ভাঙার মধ্য দিয়েই তাঁর যোগদান পর্ব শেষ হয়।
এদিকে যে তারিখে তাকে যোগদান দেখানো হয়েছে, তাঁর দুই দিন পরে অর্থাৎ ৭ এপ্রিল বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবু সাইদ মো. ফরিদ হোসেন প্রধান শিক্ষকের পদ এখনো শূন্য আছে জানিয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠান। কেন হোসনেয়ারা আফরোজকে পেছনের তারিখে যোগদান করানো হলো এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছেন শিক্ষক-কর্মচারীদের মনে। আবু সাইদ মো. ফরিদ হোসেনকে বিধি লঙ্ঘন করে আবারো ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
২০১৯ সালে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিশ্বনাথ সাহা বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ায় শূন্য পয়ে যায় পদটি। আগে থেকেই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদও শূন্য ছিল। ওই বছরের ১৬ এপ্রিল শর্তসাপেক্ষে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেব দায়িত্ব দেওয়া হয় সহকারী শিক্ষক আবু সাঈদ মো. ফরিদ হোসেনকে। ২০১৯ সালের ১৩ মে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহপিরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ গোলাম ফারুক স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে চারটি শর্ত দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রথম শর্ত হচ্ছে শূন্যপদে প্রধান শিক্ষক অথবা জ্যেষ্ঠতম সহকারী প্রধান শিক্ষক যোগদান করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তিনি এ আদেশের প্রদত্ত ক্ষমতা বিলুপ্ত হবে। অর্থাৎ নতুন যিনি সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করবেন তিনিই দায়িত্ব পেয়ে যাবেন। হোসনেয়ারা আফরোজ দায়িত্ব পাওয়ার পরে নিয়মানুযায়ী তিনি বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব এবং ডিজি’র কাছে চিঠি পাঠাবেন। কিন্তু তিনি এসব কিছু না করেই সাতদিনে ছুটির আবেদন করেন অবৈধ প্রক্রিয়ায়। ৫ এপ্রিল যোগদান দেখিয়ে তাঁর পক্ষে বিভিন্ন স্থানে মেইল পাঠানো হয় ১২ এপ্রিল। প্রকৃতপক্ষে ১২ এপ্রিল বিকেলে তিনি বিদ্যালয়ে আসেন, যা বিদ্যালয়ের সিটিটিভির ফুটেজে সংরক্ষিত রয়েছে।
কেন তিনি পেছনের তারিখ দেখিয়ে যোগদান করলেন এ বিষয়ে জানার জন্য তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার কল কলেও পাওয়া যায়নি। পরে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বার্তা পাঠালেও তিনি তার জবাব দেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষক জানান, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পাঠানো চিঠির কপিটি নতুন যোগদানকারী সহকারী প্রধান শিক্ষকের কাছে দিলেও তিনি তা পড়ে দেখেননি। এটা পড়লে, তিনি যদি ছুটিতেও যান তাহলে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে একজনকে দায়িত্ব দিতে হবে। কিন্তু আবু সাঈদ মো. ফরিদ হোসেনকে অবৈধভাবে দায়িত্ব দেওয়ার জন্যই তিনি তড়িঘড়ি করে যোগদান করেন, আবার দ্রæত বরিশাল চলে যান। এতে বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে। শিক্ষকরাও দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। বিদ্যালয়ে পাঠদান শুরু হলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের মাঝেও পড়বে বলে মনে করেন অনেক শিক্ষক।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবু সাঈদ মো. ফরিদ হোসেনের মুঠোফোনে কল করলেও তিনি তা ধরেননি।
আড়াই বছরে ক্লাস নেননি, শিক্ষার্থীরাও চেনে না :
ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রভাতি শাখার ইনচার্জ ছিলেন সহকারী প্রধান শিক্ষক হোসনেয়ারা আরজু। যোগদানের পর আড়াই বছরেও ক্লাস নেননি, শিক্ষার্থীরাও তাকে চেনে না, নামও জানে না। অনেক শিক্ষকও তাকে বিদ্যালয়ে কখনো দেখেনি। এই শিক্ষককেই বদলি করা হয়েছে ঝালকাঠি হরচন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। এ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদশূন্য, তাকেই নিতে হবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব। ২৯ মার্চ তাকে বদলি করা হলেও ১৪ দিন পরে তিনি যোগদান করেন। যে শিক্ষক তাঁর আগের কর্মস্থলে ঠিকমত উপস্থিত ছিলেন না, তাকেই আবার দেওয়া হচ্ছে আরেকটি বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব। এতে শঙ্কিত ঝালকাঠি সরকারি হরচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষর্থীরা। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরাও।
জানা যায়, ঝালকাঠি সরকারি হরচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিশ্বনাথ সাহা ২০১৯ সালে বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গেলে পদটি শূূন্য হয়। জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নেন সহকারী শিক্ষক আবু সাঈদ মো. ফরিদ হোসেন। চলতি বছরের শুরুতেই সিরাজ সিকদার নামে একজন সহকারী শিক্ষক যোগদান করেন এ বিদ্যালয়ে। জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পাওয়া কথা থাকলেও তাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ফরিদ হোসেনের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, বরিশাল বিভাগীয় উপপরিচালকের কার্যালয়ের দ্বারস্ত হলেও কোন সুফল পাননি সিরাজ সিকদার। জোর করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন ফরিদ হোসেন। এ অবস্থায় শিক্ষকরা পরেন বিপাকে। দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায় শিক্ষকরা। কেউ সিরাজ সিকদারের পক্ষে কেউ আবার ফরিদ হোসেনের পক্ষ নেন। একে অপরের সমালোচনায় জড়িয়ে পড়েন। শহরের অধিকাংশ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা এ ঘটনায় ক্ষুব্দ। পরিস্থিতি যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল তখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ডিজি’র নির্দেশে ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ (বালক) বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক হোসনেয়ারা আরজুকে গত ২৯ মার্চ ঝালকাঠি হরচন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়। নিয়মানুযায়ী নির্দেশের পরপরই তিনি কর্মস্থলে যোগদান করবেন। কিন্তু বদলির ১৪ দিন পরে তড়িঘড়ি করে তিনি নতুন কর্মস্থলে যোগ দিয়ে আবার ছুটি নিয়ে চলে যান।
জনতার কণ্ঠ 24 সংবাদ
বিএনপিতে অনুপ্রবেশকারীরা আ.লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে
স্টাফ রিপোর্টার : ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার সুবিদপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে …