কে এম সবুজ :
এতো অল্প বয়সেই সহপাঠীদের কষ্ট বুঝে পাশে দাঁড়ানোর মানসিকতা তৈরি হয়েছে তাদের। তাঁরা নিজের ঈদের খরচের টাকা বাঁচিয়ে সহপাঠীদের জন্য উপহার কিনেছে। উপহারগুলো ঈদের জন্য নতুন পোশাক ও শিক্ষা সামগ্রী। অস্বচ্ছল সহপাঠীদের ঈদের আগেই উপহার দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো ঝালকাঠি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের পারিবাকিভাবে স্বচ্ছল শিক্ষার্থীরা। এ কাজে তাদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন শিক্ষকরা। রমজানের বন্ধের আগেই সহপাঠীদের দেওয়া ঈদের নতুন পোশাক পেয়ে আনন্দিত পারিবারিকভাবে অস্বচ্ছল ২৩ শিক্ষার্থী। আজ বুধবার বিকেলে বিদ্যালয় মিলনায়তনে এ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক অসহায় শিক্ষার্থীদের হাতে উপহার সামগ্রী তুলে দেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মারুফা বেগমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন শিক্ষক সুলতান আহমেদ, নান্টু রঞ্জন বিশ্বাস, আ ন ম আব্দুল কুদ্দুস, শাহাদাত হোসেন, দশম শ্রেণির ছাত্র মো. মিনহাজুর রহমান শিহাব ও আহনাফ রহমান নাফিম। শিক্ষক ফয়সাল রহমান জসিম অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মারুফা বেগম জানান, আমাদের বিদ্যালয়ে অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা মেধাবী কিন্তু অস্বচ্ছল পরিবারের। তাঁরা বিদ্যালয়ে নিয়মিত আসে, পড়ালেখাও অনেক ভালো। তাদের পোশাক পুরনো দেখে অনেক সময় কষ্ট হয়। পাঠদানের সময় এসব বিষয়ে আলোচনা হলে বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী তাদের পাশে দাঁড়ায়। পারিবারিকভাবে স্বচ্ছল শিক্ষার্থীরা নিজেদের ঈদের খরচ কমিয়ে বাবা মায়ের কাছ থেকে টাকা এনে জমা রাখে। সমষ্টিগতভাবে তারা এই টাকা দিয়ে দরিদ্র পরিবারের সহপাঠিদের জন্য উপহার হিসেবে নতুন পোশাক ও শিক্ষা উপকর কেনার উদ্যোগ নেয়। এক পর্যায়ে তারা বিষয়টি শিক্ষকদের সঙ্গে আলাপ করে। শিক্ষকরাও তাদের উদ্যোগকে স্বাগত জানায়।
প্রধান শিক্ষক মারুফা বেগম বলেন, ছাত্র-শিক্ষক সবার প্রচেষ্টায় এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা অস্বচ্ছল পরিবারের ২৩ শিক্ষার্থীকে নতুন পোশাক ও শিক্ষা উপকরণ দিতে সক্ষম হয়েছি। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের। অল্প বয়সেই শিক্ষার্থীরা অপরের দুঃখকে বোঝার চেষ্টা করছে। তাদের এ মহতি উদ্যোগ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ইতিহাসে অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।
দশম শেণির শিক্ষার্থী মো. মিনহাজুর রহমান শিহাব জানায়, সহপাঠাদের পুরনো পোশাক দেখে হৃদয়ে যন্ত্রণা হতো। ওদের দুঃখকে বোঝার চেষ্টা করলাম। বিষয়টি অন্য সহপাঠীদের সঙ্গে শেয়ার করে একটি উদ্যোগ নিতে পেরেছি। আমরা বাবা মাকে বলে আসন্ন ঈদে নিজেদের খরচের টাকা থেকে কিছু অগ্রিম নিয়েছি। তাই দিয়ে বন্ধু ও সহপাঠীকে নতুন পোশাক কিনে দিয়েছি।
জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের এমন ভালবাসার দৃষ্টান্ত দেখে আমি অভিভূত হয়েছি। শিশু অবস্থাতেই তাদের সহপাঠীদের দুঃখকে জয় করার প্রচেষ্টা ভাল লেগেছে। এভাবে শুধু বিদ্যালয়েই নয়, প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে একে অপরের পাশে দাঁড়ানো উচিৎ।