Latest News
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Home / জাতীয় / সনদ জালিয়াতি ধরা পড়ায় গেজেট বাতিল : ঝালকাঠিতে মুক্তিযুদ্ধ না করেও ভাতা নিতেন সুলতান দুয়ারী

সনদ জালিয়াতি ধরা পড়ায় গেজেট বাতিল : ঝালকাঠিতে মুক্তিযুদ্ধ না করেও ভাতা নিতেন সুলতান দুয়ারী

স্টাফ রিপোর্টার :
ঝালকাঠি সদর উপজেলার নেহালপুর গ্রামের মৃত সৈয়দ আলী দুয়ারীর ছেলে মো. সুলতান আহম্মেদ দুয়ারী মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ না করেও দীর্ঘ দিন ধরে মুক্তিযোদ্ধার ভাতাসহ যাবতীয় রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছেন। পাশ্ববর্তী পিপলিতা গ্রামের মৃত. সৈয়জদ্দিনের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা সুলতান হোসেন মাঝির সঙ্গে নাম মিল থাকায় জালিয়াতি করে সনদ নেন সুলতান আহম্মেদ দুয়ারী।
অভিযোগ রয়েছে, সুলতান হোসেন মাঝির কাছ থেকে মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়ে ভাতা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে সুলতান আহমেদ দুয়ারী নিজের নামে মুক্তিযোদ্ধার ভাতা করিয়ে নেন। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে রাষ্ট্রীয় সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছেন তিনি। সন্তানদের মুক্তিযোদ্ধা কোঠায় দিয়েছেন চাকরিও। অবশেষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় তাঁর গেজেট ও সনদ বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা সুলতান হোসেন মাঝি ২০১৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর স্ত্রী ফরিদা বেগম, ছেলে মিজানুর রহমান, মিরাজ মাঝি, নুবীন মাঝি ও মেয়ে নুপুর বেগম। জীবীত অবস্থায় প্রতারক সুলতান আহম্মেদ দুয়ারীর সঙ্গে শক্তি ও বুদ্ধিতে পারেননি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। নিজের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেখে যেতে পারেননি তিনি। পরিবারের দাবি, তাঁর নামে গেজেট করে স্ত্রীর নামে ভাতার ব্যবস্থা করা হোক।
জানা যায়, সুলতান হোসেন দুয়ারীর মুক্তিযোদ্ধার গেজেট ও সনদ বাতিল বাতিল হওয়ায় আর্থিকসহ সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করার জন্য সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নোটিশ দেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গেজেট অধিশাখার উপসচিব রথীন্দ্রনাথ দত্ত। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৪৮তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সৈয়দ আলী দুয়ারীর ছেলে সুলতান হোসেন দুয়ারীর মুক্তিযোদ্ধার গেজেট ও সনদ বাতিল করা হয়। উপসচিব রথীন্দ্রনাথ দত্ত গত ২২ নভেম্বরে স্বাক্ষরিত চিঠিটি ১ ডিসেম্বর ঝালকাঠিতে পৌঁছলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবেকুন নাহার উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।
জেলায় আরো চারজনের মুক্তিযোদ্ধার সনদ ও গেজেট বাতিল করা হয়েছে। তাঁরা হলেন, সদর উপজেলার সোনামদ্দি হাওলাদারের ছেলে মো. আবদুর রব হাওলাদার, তাছেন উদ্দিন তালুকদারের ছেলে মোহাম্মদ আলতাফ হোসেন, নলছিটি উপজেলার মো. দলিল উদ্দিন মৃধার ছেলে মো. সুলতান আহম্মেদ মৃধা ও কাঁঠালিয়া উপজেলার সিরাজ উদ্দিনের ছেলে আবুল বাশার। জামুকার ৫৭ তম সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মো. আবদুর রব হাওলাদার, ৬৬ তম সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আবুল বাশার, ৬১তম সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মো. সুলতান আহম্মেদ মৃধা ও ৬৫ তম সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মোহাম্মদ আলতাফ হোসেনের গেজেট ও সনদ বাতিল করা হয়।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ঝালকাঠি সদর উপজেলার খতিয়ান নং-১৬৬, সংগ্রামনীল মৌজার জেএল নং ১১০ সম্পত্তির মাঠ পর্চায় এবং জাতীয় পরিচয়পত্রে (নং-৪২০৩১১১৮৫০৬০) তাঁর নাম রয়েছে সুলতান আহম্মেদ দুয়ারী, বাবা মৃত সৈয়দ আলী দুয়ারী, গ্রাম-নেহালপুর (দুয়ারীবাড়ি)। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা সনদপত্রে তাঁর নাম রয়েছে সুলতান হোসেন, গ্রাম- পিপলিতা, পোস্ট- বাসন্ডা, ঝালকাঠি।
১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙালী জাতিকে মুক্ত করতে স্বাধীকার আন্দোলনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন সুলতান হোসেন। কখনো রাষ্ট্রীয় সুবিধা পাবো সে আশায় বা লোভে নয়, তখন শুধুমাত্র ঝাপিয়ে পড়ি দেশ মাতৃকার টানে। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর স্বাধীনতা অর্জিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় কর্ণেল এমএজি ওসমানির স্বাক্ষরিত মুক্তিযোদ্ধার সনদ প্রদান করা হয় সুলতান হোসেনকে। পার্শ্ববর্তী নেহালপুর গ্রামের মৃত সৈয়দ আলী দুয়ারীর ছেলে মো. সুলতান আহাম্মেদ দুয়ারী তাঁর কাছে মুক্তিযোদ্ধার সনদ কেমন তা দেখতে আসেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘তোমার-তো লোকজন নেই, আমার মন্ত্রণালয়ে নিজস্ব লোক আছে। আমি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তোমার সনদের ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দেব।’ এ আশ্বাসে প্রতিবেশী হিসেবে সনদটি দেখে তিনি নিয়ে যান। সেই অনুযায়ী সনদপত্রে প্রতারণা করে নাম ও পিতার নাম জালিয়াতির মাধ্যমে কৌশলে পরিবর্তন করে নিজেকে গেজেটভুক্ত করে। যার মুক্তিবার্তা নং-০৬০২০১০৬২৮। বিষয়টি জানতে পেরে সুলতান দুয়ারীর কাছে চাইতে গেলে, তিনি সুলতান হোসেনকে হত্যাসহ ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়।
সুলতান আহম্মেদ দুয়ারীর আপন চাচা বয়জ্যেষ্ঠ ব্যক্তি আকরাম আলী দুয়ারী (৯১) বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা বাড়িতেই ছিলাম। সুলতান আহম্মেদ আমার বড় ভাইয়ের ছেলে। তখন ওর বয়স ১৭-১৮ হবে। সে কখনো মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেননি। পিপলিতার সুলতান হোসেন মাঝির সার্টিফিকেট নিয়ে কেমন কেমন করে যেন নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছে। সুলতান মাঝী অশিক্ষিত হওয়ায় সুলতান আহম্মেদ দুয়ারীর সাথে আর পারে নাই।
সুলতান আহম্মেদ দুয়ারীর বাল্যবন্ধু আবদুল হক তালুকদার বলেন, সুলতান আহম্মেদ দুয়ারী আমার চেয়ে এক থেকে দেড় বছরের বড়। ছোটবেলা থেকেই আমরা একত্রে খেলাধুলা করতাম এবং স্কুলে যেতাম। দেশ স্বাধীনের সময়ও আমরা একত্রেই ছিলাম। ও কোন যুদ্ধে যায়নি। কয়েকবছর পূর্বে শুনি সুলতান দুয়ারী মুক্তিযোদ্ধা।
এ ছাড়াও নেহালপুরের প্রবীণ ব্যক্তি হাবিবুর রহমান তালুকদার, সুলতান দুয়ারীর চাচাতো ভাই আলতাফ হোসেন, মো. আমির হোসেনসহ এলাকাবাসী জানান, সুলতান দুয়ারী কখনোই কোন যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেনি। সে পিপলিতা গ্রামের সুলতান হোসেন মাঝির সার্টিফিকেট ব্যবহার করে বাবার নাম ভুল হয়েছে বলে পরিবর্তন করে এখন নতুনে মুক্তিযোদ্ধা হয়েছে। তিনি জালজালিয়াতি অনেক দক্ষ। এলাকার বিভিন্ন নিরীহ জনের জমি জাল স্বাক্ষর করে দলিল তৈরি করে দখল করে। এর প্রতিবাদ করলে বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রাণি করে।
প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা সুলতান হোসেন মাঝির স্ত্রী ফরিদা বেগম বলেন, আমার স্বামীর নাম জালিয়াতি করে যে ব্যক্তি এতোদিন মুক্তিযোদ্ধার ভাতা নিয়েছে, তাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি। আমার স্বামীর নাম অন্তর্ভুক্ত করে গেজেট প্রকাশ করার অনুরোধ করছি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।

জনতার কণ্ঠ 24 সংবাদ

বিএনপিতে অনুপ্রবেশকারীরা আ.লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার : ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার সুবিদপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে …