স্থানীয় প্রতিনিধি :
চারদিকে ঝোপ-ঝাড়-জঙ্গল। নেই কোন বসতি। জমি আছে কিন্তু পরিত্যক্ত। ফসল হয় না, তাই কৃষকের মুখেও হাসি নেই। এমন বিস্তৃর্ণ জঙ্গল পরিস্কার করেই গড়ে তোলা হয়েছে একটি মাছের ঘের। সাথে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ফল ও সবজির সমাহার। ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার হয়বাতপুর গ্রামের আলিফা সমন্বিত মৎস্য খামারটি এখন জেলার দৃষ্টান্ত। এখান থেকে মাছ, ফল ও সবজি বিক্রি করে বছরে ২০ লাখ টাকা আয় হচ্ছে। কর্মসংস্থানের পথ খুঁজে পেয়েছেন এলাকার বেকার যুবকরা।
জানাযায়, ২০১৪ সালে ১৬ একর জমি কিনে ঝোপ-ঝাড়-জঙ্গল পরিস্কার করেন স্থানীয় হয়বাতপুর গ্রামের হারুন অর রশীদ। ১২ একর জমির চারদিকে মাটি দিয়ে বেড়া দিয়ে তিনি মাছের ঘের তৈরি করেন। রুই, কাতল, সিলভার কার্প, চিতল, পাঙ্গাস, থাই পুঁটি ও শিং মাছের চাষ করে পেয়েছেন সফলতা। এর পরই কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে তিনি মাছের ঘেরের পাশে গড়ে তোলেন বিভিন্ন প্রজাতির ফলের বাগান। আম, মাল্টা, আমরা, পেয়ারা, লেবু, পেঁপে ও কলা হচ্ছে এই বাগানে। মাছের ঘেরের আইলে রয়েছে বিভিন্ন ধরণের সবজি। লাউ, করল্লা, বেগুন ও বোম্বাই মরিচেরও দেখা মেলে এখানে। মাছ, ফল ও সবজি বিক্রি করে সমন্বিত এই মৎস্য খামার থেকে বছরে লাভ হচ্ছে ২০ লাখ টাকা। পালন করা হচ্ছে দেশী গরু। ঝালকাঠি জেলার বিখ্যাত এই খামারটিতে কাজ করে বেকারত্ব ঘুচিয়েছেন স্থানীয় যুবকরা। এখানের আয় থেকেই সংসার চলছে অর্ধশত ব্যক্তির। এলাকার মানুষও এখন এমন খামার করতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন এসে খামারটি দেখে খোঁজখবর নিচ্ছেন। বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ায় খুশি স্থানীয়রা। কৃষি ও মৎস্য বিভাগের পরামর্শে গড়ে ওঠা সমন্বিত মৎস্য খামারে নতুন করে লাগানো হয়েছে উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য নিরাপদ ভিয়েতনামের খাটো জাতের শতাধিক নারিকেল গাছের চারা। ফলন আসলে আরো লাভবান হবেন খামারের মালিক।
খামারের পরিচালক বেলায়েত হোসেন বলেন, হয়বাতপুর গ্রামের এই এলাকাটি ছিল জঙ্গলে ভরা। আমরা অল্পদামে জমি কিনে জঙ্গল পরিস্কার করেছি। পরে মৎস্য বিভাগের পরামর্শ নিয়ে ১২ একর জুড়ে একটি মাছের ঘের করেছি। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের চাষ আমাদের সফলতা এনে দেয়। মাছের ঘেরকে কেন্দ্র করে এখানে বেকার যুবকরা কাজের সন্ধান পায়। পরে আমরা কৃষি ও প্রাণি সম্পদ বিভাগের পরামর্শ নিয়ে মাছের ঘেরের সাথেই সবজি ও ফলের বাগান তৈরি করি। এখান থেকেও লাভ হচ্ছে। এখন আমরা দেশী গরুর একটি খামারের নতুন একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। অল্পকিছু গরু আমাদের খামারে রয়েছে। অল্পদিনের মধ্যেই এখানে অর্ধশত গরু পালন করা হবে। আমাদের সমন্বিত এই খামার থেকে বছরে কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা আয় হচ্ছে।
খামারের শ্রমিক মাহাবুব হাওলাদার বলেন, আমরা আগে মানসের ক্ষেতে দিনমজুরের কাম করতাম। এহন এই খামারে কাম করি। এহান দিয়া মাস গ্যালে ১০ হাজার টাহা বেতন পাই। কোন সময় মাছের ঘেরে আবার ফলের বাগানে কাম করি। আমার মত আরো ১৫/২০ জন শ্রমিক প্রতিদিন সকাল হইতে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাম করি।
পার্শ্ববর্তী নাঙ্গুলী গ্রামের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, আমাদের এখানে সমন্বিত মৎস্য খামারটি একটি দৃষ্টান্ত। খামারটি দেখে ইতোমধ্যে আমিও একটি মাছের ঘের করেছি। ঘেরের পাশে ফলের ও সবজির বাগান করার পরিকল্পনা নিয়েছি। আশাকরি আমার মত এলাকার বেকাররা এভাবে পতিত জমিতে মাছের ঘের করলে অবশ্যই লাভবান হতে পারবে।
নলছিটি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাইদুর রহমান বলেন, হারুন অর রশীদের মাছের ঘেরের চারপাশে আমরা ফল ও সবজির বাগান করার পরামর্শ দিয়েছি। ঝালকাঠি জেলায় এতবড় সমন্বিত খামার আর নেই। যেমন কাশফুলের সৌন্দর্য রয়েছে খামারের চারপাশে, তেমনি ফলের বাগানের সমাহার দেখতে অনেকেই আসছেন এখানে।
ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শেখ মো. আবুবকর ছিদ্দিক বলেন, এ ধরণের পরিত্যক্ত জমি ফেলে না রেখে, তার সদব্যবহার করে মাছের ঘের, ফসলের ক্ষেত ও সবজির বাগান করা উচিৎ। এতে একদিকে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়, অন্যদিকে আয়ের পথ খুঁজে পেয়েছেন খামারের মালিক।