স্টাফ রিপোর্টার :
ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম জোমাদ্দারের বিরুদ্ধে জলবায়ু সহনশীল গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের বিল ওঠাতে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও ঝালকাঠির জেলা প্রশাসকসহ ১১টি দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
জানা যায়, উপজেলার সুবিদপুর ইউনিয়নের ঘণবসতিপূর্ণ গ্রাম ইছাপাশা। এ গ্রামের মানুষের ইউনিয়ন পরিষদ, তালতলা বাজার, ইছাপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইছাপাশা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পাশের মালুহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কামদেবপুর সিনিয়র মাদ্রাসায় যাওয়ার একমাত্র মাটির রাস্তাটির বেহালদশা দীর্ঘদিনের। এ অবস্থায় ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে জলবায়ু সহনশীল গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ডানিডা কর্তৃপক্ষ স্থানীয় সরকার বিভাগের (এলজিইডি) মাধ্যমে এক কিলোমিটার রাস্তাটি নির্মাণের জন্য ২৪ লাখ টাকা বরাদ্দ করে। তিনটি ধাপে রাস্তার প্রক্কলন করা হয়। প্রথমে মাটির কাজের জন্য ৯ লাখ ৩৭ হাজার ৫৯৭ টাকা, রাস্তার মাঝে বক্সকালভার্টের জন্য ১১ লাখ ৭৪ হাজার ৭২ টাকা এবং ঢালুকরণের (স্লোপ প্রটেকশন) জন্য দুই লাখ ৯৩ হাজার ৭৪২ টাকা বরাদ্দ হয়। তিনটি ধাপে কাজের জন্য তিনটি কমিটি ঘটন করা হয়। কমিটির সদস্যরা কাজ করার সময় বরাদ্দ থেকে অগ্রিম ২৫ ভাগ থেকে ৫০ ভাগ পর্যন্ত টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। প্রকল্পের টাকা উত্তোলনের জন্য নলছিটি উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম জোমাদ্দারের কাছে গেলে তিনি বিলের ৫ ভাগ ঘুষ দাবি করেন। মাটির কাজের কমিটির সভাপতি সুমনা আক্তার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাকে ১০ হাজার টাকা, বক্সকালভার্ট নির্মাণ কাজের সভাপতি রেহানা বেগম ২৫ হাজার টাকা ও ঢালুকরণ কাজের সভাপতি লিলি বেগম পাঁচ হাজার টাকা ঘুষ দেন। দাবিকৃত ৫ ভাগ টাকা না দেওয়ায় তিনি বিল নিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। কমিটির সভাপতিরা তাকে অনুরোধ করে প্রথম পর্যায়ের বিল তুলে নেন। এখনো অধিকাংশ কাজের বিল বাকি রয়েছে। এ অবস্থায় দাবিকৃত সব টাকা না দিলে তিনি বিল দিবেন না বলে জানিয়ে দেন। এতে বিপাকে পড়েন সংশ্লিষ্ট শ্রমিক ও কমিটির সদস্যরা। ঘুষগ্রহণকারী এ কর্মকর্তার অপসারণ চেয়ে কমিটির সভাপতিরা এবং স্থানীয় এক ইউপি সদস্য বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন।
মাটির কাজের সভাপতি সুমনা আক্তার বলেন, আমার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েও বাকি কাজের জন্য টাকা অগ্রিম দিতে বলেন। তাকে (হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা) ঘুষ না দিলে আমাদের প্রকল্পের টাকা দিবেন না বলে ঘোষণা দেন।
সুবিদপুর ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ফিরোজ আলম সোহাগ বলেন, কমিটির লোকজন গরিব বিধায় রাস্তায় কাজ করছে। তাদের বিল ওঠাতে যদি টাকা লাগে, তাহলে গবির মানুষ যাবে কোথায়! আমি নিজেও বিষয়টি নিয়ে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি, কিন্তু তিনি কারো কথাই শুনছেন না।
এ ব্যাপারে উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম জোমাদ্দার বলেন, রাস্তার কাজের জন্য কমিটি থাকলেও কাজ করাচ্ছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য ফিরোজ আলম সোহাগ। পুরো কাজটিতে অনিয়ম হচ্ছে, এটা ধরা পড়ায়, আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে।