স্টাফ রিপোর্টার :
ঝালকাঠির নলছিটিতে সাইদুল ইসলাম তালুকদার হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া মোল্লারহাট ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের পুলিশ রিমান্ডে দিয়েছেন আদালত। আজ বুধবার দুপুরে ঝালকাঠির জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে শুনানি শেষে বিচারক তারেক সামস এ আদেশ প্রদান করেন। গত শনিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে সাইদুলকে কুপিয়ে হাত-পা কেটে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরের দিন তাকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। আদালত শুনানির জন্য বুধবার দিন ধার্য করেন।
হত্যাকান্ডের ঘটনায় শনিবার রাতেই সাইদুলের বাবা আব্দুল আজিজ তালুকদার বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পাঁচ-ছয়জনকে আসামি করে নলছিটি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্র জানায়, এক সময়ের ঘনিষ্ট সাইদুল ইসলাম তালুকদার অবাধ্য হওয়ায় ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন তাঁর দুই ভাই ও সহযোগিদের নিয়ে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। সাইদুলের সঙ্গে থাকা তাঁর ভাগনে রুম্মান হাওলাদাকেও (২৫) কুপিয়ে আহত করে তারা। নিহতের পরিবার ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। নিহত সাইদুল ইসলাম তালুকদার মোল্লারহাট ইউনিয়ন ছাত্রলীগকর্মী সজল হাওলাদার হত্যা মামলার প্রধান আসামি ছিলো। আহত রুম্মানকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জানা যায়, ২০১৬ সালের ২২ মার্চ নলছিটিতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মোল্লারহাট ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী কবির হোসেনের ঘনিষ্ট কর্মী ছিলেন নাচনমহল গ্রামের আবদুল আজিজ তালুকদারের ছেলে সাইদুল ইসলাম তালুকদার। ইউপি চেয়ারম্যান কবির তাঁর নির্বাচনী কাজে এবং নানা অপরাধে সাইদুলকে ব্যবহার করতেন। এমনকি কবিরের পরিবারের লোকজনও সাইদুলকে দিয়ে প্রতিপক্ষকে দমন নির্যাতন করাতেন। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পরে সাইদুল একটি পিস্তল নিয়ে এলাকায় চলাফেরা করতো। তাঁর ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পেতো না। ইউপি নির্বাচনে কবিরের সঙ্গে বিরোধ দেখা দেয় বরিশাল বিএম কলেজের ছাত্র ও মোল্লারহাট ইউনিয়ন ছাত্রলীগকর্মী সজল হাওলাদারের। এরই জের ধরে কবিরের নির্দেশে ২০১৬ সালের ৩ জুলাই সজলকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সাইদুলের গুলিতে সজল নিহত হয় বলে পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। এ মামলায়ও ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন ও সাইদুল ইসলাম তালুকদার আসামী হয়। পরে দুজনেই জামিনে মুক্তি পান। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরে কবিরের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল যাচ্ছিল না সাইদুলের। পরিবারের অনুরোধে সাইদুল কবিরের সঙ্গে চলাফেরা বন্ধ করে দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হন ইউপি চেয়ারম্যান ও তাঁর পরিবারের লোকজন। সাইদুল তাদের অবাধ্য হওয়ায় কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে নিহতের বড় বোন আকলিমা বেগম জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মোল্লারহাট ইউনিয়নের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ইউপি চেয়ারম্যান কবিরের অস্ত্র জমা থাকতো সাইদুলের কাছে। এ কারণেই সাইদুল বেপরোয়া হয়ে ওঠে। মাদক সেবন, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজীসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে সাইদুল। এক সময়ের ঘনিষ্ট সাইদুল কথার অবাধ্য হওয়ায় তাকে বিভিন্ন সময় ভয় দেখাতেন ইউপি চেয়ারম্যান কবির। এতেও সে ফিরে না আসায় শনিবার বিকেলে সাইদুল তাঁর ভাগনে রুম্মানকে নিয়ে বাড়ি থেকে নাচনমহল বাজারে যাওয়ার সময় ইউপি চেয়ারম্যান কবিরের নির্দেশে ১৮-২০ জনের একটি দল ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তাদের আহত করে। সাইদুলের হাত ও পা কেটে ফেলা হয়। এতে অতিরিক্ত রক্তক্ষণে সাইদুলের ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। চিৎকার শুনে স্থানীয় এসে তাদের উদ্ধার করে।
নিহতের বাবা আবদুল আজিজ তালুকদার বলেন, আমার ছেলে ও বোনের ছেলের ওপর হামলা স্থানীয় লোকজন দেখলেও সন্ত্রাসীদের ভয়ে তারা কেউ সামনে যায়নি। সবার চোখের সামনেই আমার ছেলেকে কুপিয়ে হাত পা কেটে হত্যা করা হয়। আমার বোনের ছেলেটিও গুরুতর অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছে। তাঁর অবস্থাও ভাল নয়। ইউপি চেয়ারম্যান কবির, তাঁর দুইভাই দেলোয়ার ও মোজাম্মেলসহ আসামিরা আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। আমি এ ঘটনায় নলছিটি থানায় একটি হত্যা মামলা করেছি। পুলিশ মামলার প্রধান আসামি ইউপি চেয়ারম্যান কবিরকে গ্রেপ্তার করেছে। অপর আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।
নলছিটি থানার ওসি (তদন্ত) আবদুল হালিম তালুকদার বলেন, সাইদুল হত্যাকান্ডের পরপরই পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে মোল্লারহাট ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেনকে গ্রেপ্তারের পর তিন দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবো। এ হত্যাকান্ডের সঙ্গে সে জড়িত বলে আমরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছি। আরো যারা এ ঘটনায় জড়িত তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।