কে এম সবুজ :
ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার সঙ্গে বিভাগীয় শহর বরিশালের যাতায়াতের একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ নলছিটি-দপদপিয়া সড়ক। দুরবস্থায় থাকা ৮ কিলোমিটার সড়কটি প্রশস্তকরণসহ নতুন করে নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ। গত দুই বছর ধরে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে সড়কের উন্নয়ন কাজ করছেন। সড়কের মাঝে ১০০ বিদ্যুতের খুঁটি থাকায় ছয়মাস আগে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। খুঁটি অপসারণ কার্যক্রম সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং বিদ্যুৎ বিভাগের মধ্যে চিঠি চালাচালির মধ্যেই সিমাবদ্ধ রয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে এখনো বরাদ্দ না পাওয়ায় বিদ্যুৎ বিভাগ খুঁটি সরাতে পারছে না। ফলে সড়কটি ধুলাবালিতে একাকার হয়ে আছে। এতে আশেপাশের বাসিন্দা ও পথচারীরা পড়েছেন দুর্ভোগে। অভিযোগ উঠেছে, বিদ্যুৎ বিভাগ এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের মধ্যে টানাটানির কারণে জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটির উন্নয়ন কাজে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অবহেলাকেও দায়ি করেছেন সড়কটি দিয়ে যাতায়াতকারী যাত্রীরা। এলাকাবাসী ও পথচারীরা সড়ক উন্নয়ন কাজ ফেলে রাখার প্রতিবাদ জানিয়ে আন্দোলনে নেমেছেন। বুধবার সকাল ১০টায় সড়কের খোজাখালী এলাকায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের পাশাপাশি পথচারীরাও অংশ নেয়। মানববন্ধন চলাকালে সড়কের দুইপাশে শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে। সড়কটির নির্মাণ কাজ দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করার আহ্বান জানান মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা। জনদুর্ভোগের শিকার স্থানীয় যুবকরা এ মানববন্ধনের আয়োজন করে। এতে বক্তব্য দেন কামরুল মৃধা, ইসলামাইল তালুকদার ও সাইফুলর রহমান তুর্য্য।
বক্তারা অভিযোগ করেন, বিভাগীয় শহর বরিশালের সঙ্গে যাতায়াতের একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ নলছিটি-দপদপিয়া সড়কটি প্রসস্তকরণসহ নতুন করে নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স কামরুল অ্যান্ড ব্রাদার্সকে কাজটি দেওয়া হয়। দুই বছর ধরে ঠিকাদার ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে কাজটি করছেন। সড়কের মধ্যে থাকা বিদ্যুতের খুঁটি এখনো অপসারণ করা হয়নি। এ অবস্থায় প্রায় ছয়মাস আগে থেকে নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যেই যানবাহন চলাচল করছে ঝুঁকি নিয়ে। যানবাহন চলাচল করায় ধুলাবালিতে সড়কটি একাকার হয়ে আছে। দুই বছর ধরে এ সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী ও এলাকাবাসী চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। তাই সড়কটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্মাণ করার দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করে এলাকাবাসী। আগামী এক মাসের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করা না হলে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেন মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা।
সড়ক দিয়ে নিয়মিত যাতায়াতকারী মনির হোসেন বলেন, সড়ক দিয়ে যাতায়াত করা খুবই কষ্টকর। ধুলায় জামা-কাপড় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন যাতায়াত করায় এখন শ্বাসকষ্ট হয়েছে।
ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালক মো. সুজন বলেন, সড়কটির দুরবস্থার কারণে আমাদের মোটরসাইকেল সপ্তাহে একবার মেকারের কাছে নিতে হয়। যাত্রী এবং আমাদের পোশাক ধুলায় ভরে যায়। ঠিকাদারের খামখেয়ালির কারণে দুর্ভোগ পোহাচ্ছি আমরা।
সরদল এলাকার বাসিন্দা কামরুল মৃধা বলেন, কোন গাড়ি গেলেই সড়কের আশেপাশের বাড়িতে ধুলা ঢুকে পড়ে। এ সড়ক দিয়ে আমরা নিয়মিত যাতায়াত করি। পোশাক নষ্ট হচ্ছে যেমন, তেমনি শ্বাসকষ্টও হচ্ছে। আমরা মারাত্নকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। তাই সড়কটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।
জানা যায়, সড়কের দুই পাশে ৬ ফুট বাড়িয়ে ১৮ ফুট প্রস্থ প্রশস্তকরণের এ উন্নয়ন কাজ শুরু করে সওজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০১৯ সালের আগস্ট মাসের শেষের দিকে নলছিটি বরিশাল আঞ্চলিক মাহাসড়কের দপদপিয়া পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার সড়কের উন্নয়ন কাজ শুরু হয়। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২ কোটি টাকা। এ সড়কের মধ্যে প্রায় ১০০টি বৈদ্যুতিক খুঁটি রয়েছে। প্রশস্তকরণ হওয়ায় সড়কের মাঝে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলো অপসারণ করা হয়নি। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দুই পাশের মাটি কেটে বালি ভরাট করে সড়কটির কাজ ফেলে রাখে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের দাবি, নলছিটি বাসস্ট্যান্ড থেকে দপদপিয়া পর্যন্ত সড়কের উন্নয়ন কাজের জন্য বিদ্যুতের খুঁটি সরানোর জন্য ওজিপাডিকো বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ওজেপিাডিকো বলছে, প্রকল্প তৈরি করে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে চিঠি দিলেও তারা বরাদ্দ দিচ্ছে না। ফলে সড়কের মাঝে খুঁটি সরানো যাচ্ছে না। এই দুই বিভাগের চিঠি চালাচালির মধ্যেই আটকে আছে সড়ক উন্নয়ন কাজ।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কামরুল অ্যান্ড ব্রাদার্সের ব্যবস্থাপক শেখ এনামুল হক বলেন, খুঁটি সরানোর জন্য সড়ক বিভাগের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিভাগে আবেদন করা হয়েছে। তারা খুঁটি সরানোর ব্যবস্থা করলে আমাদের কাজ করা সহজ হবে। বাকি কাজ আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। করোনার মধ্যে বরাদ্দ দিতে না পারায় কাজ করতে পারছি না। আমরা ইচ্ছে করে কাজ বন্ধ রাখছি না।
ওজোপাডিকোর নলছিটি আবাসিক প্রকৌশলী ফিরোজ হোসেন সন্যামত বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগ খুঁটি সরানোর উদ্যোগ নেওয়ার পর একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। খুঁটি সরানোর জন্য প্রাক্কলন ব্যয় নির্ধারণ করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। এখনো সড়ক ও জনপথ বিভাগ বরাদ্দ না দেওয়ায় খুঁটি অপসারণ করা যাচ্ছে না।
ঝালকাঠি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ নাবিল হাসান বলেন, করোনাকালে কয়েকটি উন্নয়ন কাজে বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না। এর মধ্যে নলছিটির সড়কটিও রয়েছে। তার পরেও আমরা ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি অল্প দিনের মধ্যেই কাজ শুরু করবেন। বিদ্যুতের খুঁটি অপসারণের জন্য বরাদ্দ আসলেই বিদ্যুৎ বিভাগকে জানানো হবে। খুঁটি অপসারণ ছাড়া বাকি কাজগুলো ঠিকাদার করে ফেলবে।