Latest News
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Home / জাতীয় / ডেঙ্গুর রেকর্ড : সরকারি হিসাবে এ মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৭ হাজারের বেশি

ডেঙ্গুর রেকর্ড : সরকারি হিসাবে এ মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৭ হাজারের বেশি

ডেস্ক রিপোর্ট :
ঢাকাবাসীর অন্যতম আলোচনার বিষয় এখন ডেঙ্গু। অনেক পরিবারে একাধিক সদস্য ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। রাস্তাঘাটে, বাসে, হোটেলে, মার্কেটে, স্কুল-কলেজে ডেঙ্গু নিয়ে আলোচনা। মানুষের অভিযোগ, সিটি করপোরেশন মশা নিধনে বা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনের ব্যর্থতায় ডেঙ্গুর প্রকোপ এ বছর উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। মশার অকার্যকর ওষুধ ব্যবহার নিয়েও মানুষের মধ্যে ক্ষোভ আছে। তবে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ডেঙ্গুর ধরন বদলে যাওয়া। চিকিৎসকরা বলছেন, এবার স্টেজ-৩ ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি। স্টেজ-৩ ডেঙ্গুতে মৃত্যুঝুঁকিও বেশি থাকে। এতে রক্তের প্লাটিলেট হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি রোগীর রক্তচাপও দ্রুত কমে যায়। আর ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বা বাজে অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গতকাল এক অনুষ্ঠানে বলেন, ডেঙ্গুর যন্ত্রণা কি আমি বুঝি। আল্লাহ যেন কারো ডেঙ্গু না দেয় বলে সবার জন্য দোয়া করেন।
এদিকে রাজধানীর কোন এলাকায় কী ধরনের মশার উপস্থিতি, তা জানতে ২০১৫-১৬ সালে নর্থ সাউথ ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা পরিচালনা করে। গবেষকরা ঢাকার ছয়টি উদ্যানের বছরব্যাপী নমুনা সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে ডেঙ্গুর প্রাইমারী বাহক এডিস ইজিপ্টি মশার উপস্থিতি পান কেবল বলধা গার্ডেনে। গবেষকরা জানান, ওই সময় উদ্যোগ নেয়া হলে সহজেই এডিস ইজিপ্টি মশার বিস্তার রোধ করা যেত। কিন্তু সিটি করপোরেশন তাতে ব্যর্থ হওয়ায় উল্টো এর বিস্তৃতি বেড়েছে। ঢাকার সব এলাকায়ই ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গুর এ বাহক।
এছাড়া অভিযোগ আছে, এ বছরও এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে আগাম প্রস্তুতি ছিল না ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের। স্বাভাবিক কীটনাশক ছিটানো কার্যক্রমও অনেকটা বন্ধ ছিল। ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বাড়লে এবং রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তড়িঘড়ি পরিচ্ছন্নতা অভিযানের উদ্যোগ নেয় সিটি করপোরেশন। তাও কাজে আসেনি। ইতিমধ্যে মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন ও মেয়রের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট।
পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. মুজাহেরুল হক বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে সরকারের আন্তরিকতা থাকলেও যারা এটি বাস্তবায়ন করবে তাদের আন্তরিকতার ঘাটতি রয়েছে। মশা মারার নামে নিম্নমানের ওষুধ ব্যবহারে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে ওষুধ ছিটানোর কাজটি যেন সঠিক সময়ে হয় সে বিষয়ে কাউন্সিলদের নির্দেশ দিয়ে তা মনিটরিং করবেন মেয়র। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পর নয়; এর আগেই মশা নিধনের কাজটি শুরু করতে হবে। মশা নিধন ছাড়া ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্ভব নয়।
ঢাকার সরকারি-বেসরকারি ৪৯টি হাসপাতালে বৃহস্পতিবারও নতুন করে ৫৪৭ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। বুধবারে ভর্তি ছিল ৫৬০ জন। এদিকে এবার মন্ত্রী, এমপি, সচিব থেকে শুরু করে কেউই বাঁচতে পারেনি ডেঙ্গুর হাত থেকে। এমনকি ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকরাও রেহাই পাচ্ছে না। ইতোমধ্যে হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন শাহাদাৎ হোসেন এবং নিগার নাহিদ নিপু নামে একজন মহিলা চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গু রোগে। এদিকে সারাদেশে যখন ডেঙ্গু নিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতির উদ্ভব হলেও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে দাবি করেছেন। রাজধানীতে পরিচ্ছন্নতা ও মশাবিরোধী সপ্তাহ উদ্বোধনের সময় এমন দাবি করেন। একই সঙ্গে গত কয়েকদিন থেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মশা নিয়ন্ত্রণে যে ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে তা অকার্যকর। এ কারণেই এ বছর রোগী বাড়ছে। অথচ স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর দাবি, মশা নিয়ন্ত্রণে যে ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে তা কার্যকর। আমরা পরীক্ষার পর তা নিশ্চিত হয়েছি। অপরদিকে ডেঙ্গু নিয়ে ছেলেধরার মত গুজব ছড়ানোর অভিযোগ করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। তিনি বলেন, সাড়ে তিন লাখ মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার যে তথ্য ছড়িয়েছে তা ছেলেধরা’র মতই গুজব এবং একই সূত্রে গাঁথা। এমন তথ্য সম্পূর্ণ কাল্পনিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, মশা নিয়ে রাজনীতি কাম্য নয়। সাঈদ খোকন বলেন, সরকার দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞ জনগণকে নিয়ে এই ষড়যন্ত্রকারীদের মোকাবেলা করবে। ডেঙ্গু রোগীদের পাশে ও সঙ্গে থেকে ডেঙ্গু মোকাবেলার মধ্য দিয়ে এর কঠিন জবাব দেয়ার জন্য সরকার সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে।