স্টাফ রিপোর্টার :
বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, উপমহাদেশের কিংবদন্তি রাজনীতিবিদ, বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান, সাবেক শিল্পমন্ত্রী, ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমুর (এমপি) ৭৯তম জন্মদিন আজ। নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করছে জেলা আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। এছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও আওয়ামী লীগের এ বর্ষিয়ান নেতার জন্মবার্ষিকী পালিত হচ্ছে। রাত ১২টা এক মিনিটে আমির হোসেন আমুর দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ কামনা করে দোয়া ও মিলাদের আয়োজন করে জেলা আওয়ামী লীগ। শহরের রোনালসে সড়কে আমির হোসেন আমুর বাসভবনে দোয়ায় অংশ নেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সরদার মো. শাহ আলম, সহসভাপতি ও নলছিটি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. সিদ্দিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খান সাইফুল্লাহ পনির, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র মো. লিয়াকত আলী তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুর হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসম্পাদক তরুণ কর্মকার, সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিল, জেলা কৃষক লীগের সভাপতি ও পিপি আবদুল মান্নান রসুল, সদর উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান ইসরাত জাহান সোনালী, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাফিজ আল মাহমুদ, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক রেজাউল করিম জাকির, যুবলীগ নেতা মো. কামাল শরীফ, আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট এসএম রুহুল আমীন রিজভী, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি শফিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক এস এম আল আমিন।
এদিকে আমির হোসেন আমুর জন্মদিন উপলক্ষে ঝালকাঠি পৌরসভা কর্তৃপক্ষ সকাল ১০টায় কেক কাটা, আলোচনা সভা ও দোয়া মিলাদের আয়োজন করে। কেক কাটেন পৌর মেয়র মো. লিয়াকত আলী তালুকদার। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসম্পাদক ও পৌর কাউন্সিলর তরুণ কর্মকার, জেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ।
আমির হোসেন আমুর বর্নাঢ্য জীবন :
২০৪১ সালের এই দিনে ঝালকাঠির শেখের হাট ইউনিয়নের রাজপাশা গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন আমির হোসেন আমু। ছাত্র জীবনে আমির হোসেন আমু বরিশাল বজ্র মোহন কলেজের (বিএম কলেজ) ভিপি ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন তিনি। একাত্তোরে মহান মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি প্রথম জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর কেবল দীর্ঘ কারা নির্যাতনই ভোগ করেননি, আওয়ামী লীগ পুনর্গঠন ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে দলের ঐক্যের প্রতীক হিসেবে স্বদেশে ফিরিয়ে আনতে অন্যতম ভূমিকা রাখেন। ষাটের দশকের ছাত্র আন্দোলনে তিনি অগ্রভাগে ছিলেন। ১৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে যুবলীগ পুনর্গঠনেও তার ভূমিকা অনেক। আমির হোসেন আমু ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী প্রচারে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে কারাবরণ করেন। তিনি ১৯৫৯ সালে সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ ভাষা দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক মনোনীত হন। তিনি ১৯৫৯ সাল থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৬২ সালের সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক হন। ১৯৬৫ সালে বরিশাল বিএম কলেজ থেকে বিএ এবং ১৯৬৮ সালে বরিশাল আইন মহাবিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। আমির হোসেন আমু ১৯৬৫ সালে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং ঊনসত্তরের গণআন্দোলনের অন্যতম রূপকার হিসেবে প্রচারের দায়িত্ব পালন করেন। আমির হোসেন আমু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে ¯œাতকোত্তর পাঠ শেষ করে আইন পেশার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত হন। তিনি ১৯৭০ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে বরিশাল সদর আসন থেকে নির্বাচিত হন। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে তিনি বরিশাল, খুলনা, পটুয়াখালী, যশোর ও ফরিদপুরসহ পাঁচ জেলায় মুজিব বাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৭৩ সালে ঝালকাঠি ও রাজাপুর নির্বাচনী এলাকা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আমির হোসেন আমু আওয়ামী যুব লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মণি ১৫ আগস্ট ঘাতকের হাতে নিহত হওয়ার পর তিনি যুবলীগকে পুনরুজ্জীবিত করতে কাজ শুরু করেন। ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি কেন্দ্রীয় যুবলীগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি অবিচল পথচলা এই প্রবীণ রাজনীতিবিদ শেখ হাসিনার প্রথম শাসন আমলে (১৯৯৬) খাদ্যমন্ত্রী ও বিগত শাসন আমলে (২০১৪) শিল্পমন্ত্রী হিসেবে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।