কে এম সবুজ :
ঝালকাঠি প্রেস ক্লাবের আজীবন সদস্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) জেলা প্রতিনিধি প্রবীণ সাংবাদিক হেমায়েত উদ্দিন হিমু (৬০) ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শুক্রবার রাত ৮.১০ মিনিটের সময় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। শুক্রবার বিকালে তিনি অসুস্থ হলে তাকে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের সিসিইউতে প্রেরণ করা হলে সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়। তিনি স্ত্রী ও দুই ছেলে সন্তান এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। হেমায়েত উদ্দিন হিমু পাঁচ বার ঝালকাঠি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি শুরু থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর মৃত্যুতে ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু এমপি শোক প্রকাশ করেছেন। এছাড়া ঝালকাঠি প্রেসক্লাব, রিপোর্টার্স ইউনিটি, জেলা আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন সংগঠন শোক প্রকাশ করেছেন। শনিবার দুপুরে ঝালকাঠি প্রেসক্লাবে তাঁর মরদেহ আনা হয়। সেখানে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে কেন্দ্রীয় ঈদগা ময়দানে জানাজা শেষে তাকে পৌর কবরস্থানে দাফন করা হবে। বিএ (পড়াশোনা শুরু ঝালকাঠি পৌর আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ঝালকাঠি সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিএ। এছাড়া বরিশাল ল’ কলেজ থেকে এলএলবি, প্রথম পর্ব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ)।
সাংবাদিকতায় হিমু :
দীর্ঘ ৪৪ বছর ধরে সাংবাদিকতা পেশায় ছিলেন সাংবাদিক হেমায়েত উদ্দিন হিমু। ১৯৭৭ সাল থেকে তিনি সাংবাদিকতায় জড়িত।
তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) জেলা প্রতিনিধি এবং অনলাইন নিউজ পোর্টাল সূর্যালোক নিউজ এর সম্পাদক ছিলেন। তিনি ছিলেন ঝালকাঠি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও টেলিভিশন সাংবাদিক সমিতির সভাপতি। এর আগে তিনি দৈনিক যুগান্তরে ১৭ বছর, দৈনিক বাংলা, দৈনিক মুক্তকণ্ঠ, দৈনিক দেশ, বিপ্লবী বাংলাদেশ, ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশ (ইউএনবি), এসোসিয়েটেড প্রেস অব বাংলাদেশ (এপিবি), নিউজ মিডিয়া, মিডিয়া সিন্ডিকেট, বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম, মাছরাঙা টেলিভিশনে কাজ করেন। তিনি ১৯৯২ সালে ঝালকাঠি থেকে সাপ্তাহিক সূর্যালোক পত্রিকা বের করেন। ওই পত্রিকার তিনি সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন। হিমু বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ফিচার সার্ভিসে বহুদিন ধরে ফিচার লিখছেন। বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি), গণমাধ্যম বিষয়ক সংস্থা ম্যাস্-লাইন মিডিয়া সেন্টার (এমএমসি) এবং বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সাংবাদিকতায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। দীর্ঘদিন যাবত সংবাদকর্মীদের প্রশিক্ষক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
সামাজিক কর্মকাণ্ডে হিমু :
ঝালকাঠি সচেতন নাগরিক কমিটি-সনাক (টিআইবি পরিচালিত) এর সভাপতি ছিলেন হিমু। এডাব, ঝালকাঠি জেলা শাখা সভাপতি, সূর্যালোক ট্রাস্ট্রের নির্বাহী পরিচালক, মাল্টিপার্টি অ্যাডভোকেসি ফোরামের (ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল পরিচালিত) সভাপতি, ওয়ার্ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান, ঝালকাঠি প্রেস ক্লাবের আজীবন সদস্য, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির আজীবন সদস্য, শেরে বাংলা স্মৃতি একাডেমি, ঢাকার আজীবন সদস্য, সেতু যুব সমিতি-ঝালকাঠির আজীবন সদস্য, জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি (দুপ্রক) সদস্য ছিলেন তিনি।
লোক সংস্কৃতি : বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ‘সারা দেশের লোক সংস্কৃতি বিষয়ক প্রকাশনা’ এর আওতায় ‘ঝালকাঠির লোক সংস্কৃতি’ বিষয়ক তথ্য সংগ্রহ ও লেখা এবং ছবি তোলা ও ছবি সংগ্রহ কাজে অংশগ্রহণ (এ সংক্রান্ত ‘পান্ডুলিপি’ প্রকাশনার জন্য শিল্পকলা একাডেমিতে জমা রয়েছে)।
চক্ষুদান : মানবকল্যাণের জন্য ১৯৮৪ সালে মরণোত্তর চক্ষুদানে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছেন।
রক্তদান : অসহায় মানুষের জন্য ২৮ বার স্বেচ্ছায় রক্তদান করেছেন (রক্তের গ্রুপ ‘ও’ পজেটিভ)।
সাহিত্যাঙ্গণ : বিভিন্ন সময় তাঁর সম্পাদনায় সাহিত্য সংকলন, ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়েছে। তার লেখা অসংখ্য ছড়া, কবিতা, ছোটগল্প বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ছাপা হয়েছে।
ফুটবল : ঝালকাঠি সরকারি স্কুলের ফুটবল টিমের খেলোয়াড় হিসেবে ঝালকাঠি-বরিশালের টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ।
প্রশিক্ষণ : বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান-সংস্থা থেকে মানবাধিকার, সুশাসন, অ্যাডভোকেসি, ম্যানেজমেন্ট, পরিবেশ, এনজিও কার্যক্রম, আর্সেনিক, এইচআইভি/এইডস, সমাজ উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, সাংগঠনিক দক্ষতা উন্নয়নসহ নানা বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।
পারিবারিক তথ্য : পিতা হাবিবুর রহমান ঝালকাঠি শহরের বিশিষ্ট আলোকচিত্র শিল্পী ছিলেন। মা সফুরা বেগম গৃহিণী। ৯ ভাই-বোনের মধ্যে দ্বিতীয় হিমু। স্ত্রী ইয়াসমীন আক্তার কচি ঝালকাঠির শিশু বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সম্পাদিকা। দুই পুত্র সন্তানের মধ্যে জান্নাতিন নাঈম দীপ ঢাকার স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে সাংবাদিকতায় ‘মাস্টার্স’ করে, মিডিয়া প্রোডাক্টশন কোম্পানি ‘সূর্যালোক ফিল্মস’ এর পরিচালক পদে কাজ করছে এবং আশিক হৃদয় অর্ক কুস্টিয়া ইসলামি বিশ^বিদ্যালয়ের অনার্সের (ম্যানেজমেন্ট) শিক্ষার্থী।
হিমুর যত পুরস্কার :
হেমায়েত উদ্দিন হিমু ছিলেন একজন গুণী ও প্রতিথযশা সাংবাদিক। তিনি সাংবাদিকতা ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ভালো কাজের স্বীকৃতিতে পেয়েছেন পুরস্কারও। তিনি জেলা শিল্পকলা একাডেমির গুণীশিল্পী সম্মাননা-২০১৫ (ফটোগ্রাফি) পেয়েছেন, সাংবাদিকতা ও গবেষণায় ২০১৩ সালে ঢাকাস্থ শেরে বাংলা স্মৃতি একাডেমি পদক, ২০০৯ সালে ঝালকাঠি জেলা পল্লী চিকিৎসক কল্যাণ সমিতির ‘শ্রেষ্ঠ সাংবাদিকতা পুরস্কার’, সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য ‘প্রতিভা-ললিত বাবু স্মৃতি গুণীজন সম্মাননা-১৪২২ বঙ্গাব্দ’, বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের (পিআইবি) সহায়তায় পটুয়াখালী প্রেস ক্লাব-পটুয়াখালী সাংবাদিক সমিতির উদ্যোগে ১৯৮৯ সালে অনুষ্ঠিত সাংবাদিকদের ‘সংবাদ লেখা’ প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার লাভ, ঝালকাঠি সরকারি কলেজে পড়াশোনাকালে বার্ষিক সাহিত্য-সংস্কৃতি প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন এবং ছাত্রজীবনে বিভিন্ন ক্রীড়া ও সাহিত্য প্রতিযোগিতায় অসংখ্য পুরস্কার লাভ।