কে এম সবুজ :
বিদ্যালয়ের সামনে ঝুলছে সাইনবোর্ড। তাতে লেখা আছে বাল্যবিয়ে মুক্ত বিদ্যালয়। ইউনিয়ন পরিষদেরও লাগানো আছে একই ধরণের সাইনবোর্ড। ঝালকাঠি সদর উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়নে প্রবেশ করলেই যে কারো চোখ আটকে যাবে বাল্যবিয়ে মুক্ত করার লক্ষ্যে নানা ধরনের কার্যক্রম দেখে। শুধু সাইনবোর্ড টানানোই নয়, এ ইউনিয়নের কোন বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে গেলে শিক্ষার্থীকে ‘বাল্যবিয়ে করবো না’ বলে অঙ্গীকার নামা দিতে হবে। সঙ্গে থাকতে হবে শিক্ষার্থীর অভিভাবকেরও প্রতিশ্রুতি। কোন কাজী পড়াবেন না বাল্যবিয়ে। বাল্যবিয়ের খবর পেলেই ইউনিয়ন পরিষদকে জানাতে হবে। এ সবকিছুই সম্ভব হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মুজিবুল হক আকন্দের প্রবল আগ্রহ ও ঐক্লান্তিক প্রচেষ্টায়। অবশেষে বুধবার দুপুরে ইউনিয়ন পরিষদ মিলনায়তনে এক সমাবেশে তিনি নবগ্রাম ইউনিয়নকে বাল্যবিয়ে মুক্ত ঘোষণা করেন। তাঁর এ ধরনের উগ্যোগে সহযোগিতা করে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল।
ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুল হক আকন্দ জানান, বাল্যবিয়ে একটি সামাজিক ব্যাধিতে পরিনত হয়েছে। ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে শিশুর সুরক্ষা নিয়ে প্রথমে কাজ শুরু করা হয় ইউনিয়নে। শিশুর সুরক্ষা করতে হলে প্রথমে তাদের বাল্যবিয়ে মুক্ত করতে হবে। সে লক্ষ্য নিয়েই ইউনিয়নের ১০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে বাল্যবিয়ে মুক্ত ঘোষণা করা হয়। প্রতিটি স্কুলে এ সংক্রান্ত একটি সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে গেলে শিক্ষার্থী ও তার অভিভাবককে একটি ফরম পূরণ করতে হবে। সেখানে বাল্যবিয়ে না করার অঙ্গীকার দিয়ে সাক্ষর করতে হবে। এর পরেও বাল্যবিয়ের খবর পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাউকাঠি বিন্দুবাসিনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পুস্প রানী বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের সামনে বাল্যবিয়ে মুক্ত ঘোষণার একটি সাইনবোর্ড লাগানো আছে। শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা বিদ্যালয়ে প্রবেশ করলেই সাইনবোর্ডটি দেখছেন। এতে তাদের মন থেকে বাল্যবিয়ে নামক শব্দটি মুছে যাচ্ছে।
শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার বলেন, আমরা বাল্যবিয়ে না করার অঙ্গীকার দিয়েছি। ১৮ বছরের একদিন আগেও বিয়ে করবো না। সহপাঠীদের কারো বাল্যবিয়ের আয়োজনের খবর পেলে ঠেকিয়ে দিবো।
এদিকে ইউনিয়ন পরিষদ মিলনায়তনে অ্যাডভোকেসি টিম আয়োজিত বাল্যবিয়ে মুক্ত ঘোষণার সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা খন্দকার আমিনুল ইসলাম, অ্যাডভোকেসি টিমের আহ্বায়ক সাংবাদিক হেমায়েত উদ্দিন হিমু, যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাকিনা আলম লিজা, ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক দিপু হাফিজুর রহমান, টিআইবির এরিয়া ম্যানেজার মো. রোকনুজ্জামান, প্রেস ক্লাব সাধারণ সম্পাদক মানিক রায়, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কাঞ্চন আলী মিয়া, শিক্ষক আবু বক্কর সিদ্দিক ও পুস্প রানী, শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার। অনুষ্ঠানে জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থী, গ্রাম পুলিশ, ইমাম, পুরহিত, কাজী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ উপস্থিত ছিলেন।