স্টাফ রিপোর্টার :
ঝালকাঠি সুগন্ধা পৌর আদর্শ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার ভাঙচুরের ঘটনায় দ্রুত বিচার আইনে দায়ের হওয়া মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ফাতেমা শরীফকে (৪০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার দুপুরে শহরের সিটিপার্ক নতুন চরের বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জানা যায়, সুগন্ধা পৌর আদর্শ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রীতা মন্ডল বাদী হয়ে গত রবিবার বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (বহিস্কারের জন্য প্রস্তাবিত) শারমীন মৌসুমি কেকা ও শহর বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান তাপু, যুবমহিলা লীগকর্মী ফতেমা শরীফসহ ১৭ জনের নামে দ্রুত বিচার আইনে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি নালিশী মামলা দায়ের করেন। বিচারক এ.এইচ.এম ইমরানুর রহমান ঝালকাঠি থানার ওসিকে বাদীর অভিযোগ এফআইআর হিসেবে রেকর্ডের নির্দেশ দেন। বুধবার সকালে আদালতের আদেশ থানায় এসে পোঁছালে দ্রæত বিচার আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়। মামলা দায়েরের পরপরই তদন্ত কর্মকর্তা এসআই হযরত আলী এজাহারভুক্ত তিন নম্বর আসামি ফতেমা শরীফকে গ্রেপ্তার করে। মামলায় তিনজনের নাম উল্লেখ থাকলেও ১৪ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
মামলায় প্রধান শিক্ষক রীতা মন্ডল অভিযোগ করেন, বিদ্যালয়ের খেলার মাঠের উত্তরপূর্ব কর্নারে রাষ্ট্রীয় মর্যাদার প্রতীক ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মরনে পাঁচলাখ টাকা ব্যায়ে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছিল। শহীদ মিনারে ছাত্রী ও শিক্ষকরা প্রতি বছর ভাষা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে আসছিল। কিন্তু স্কুলের শিক্ষার্থী, অভিবাবক ও শিক্ষকদের ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ভাল চোখে দেখছিল না স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত ইসলামী চক্রের দোসর পরিবারের সদস্যরা। গত ১৪ আগস্ট বিদ্যালয়ের সভাপতি পদ থেকে বাদ পড়া শারমীন মৌসুমি কেকা, আনিসুর রহমান তাপু ও ফতেমা শরীফের নেতৃত্বে অজ্ঞাতনামা আরও ১২-১৪ জন সন্ত্রাসী প্রকৃতির ব্যাক্তি সুগন্ধা পৌর আদর্শ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাচীরঘেরা খেলার মাঠের গেটের তালা ভেঙে অবৈধভাবে স্কুলের কম্পাউন্ডে প্রবেশ করে শহীদ মিনার ভেঙে মাটির সাথে গুড়িয়ে। স্থানীয় কিছু লোকজন ও কয়েকজন অভিভাবক শহীদ মিনার ভাঙার কারণ জানতে চাইলে ও বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে আসামিরা দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন করে সকলকে সরে যেতে বাধ্য করে।
রীতা মন্ডলের আইনজীবী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, শহীদ মিনার একটি গুরত্বপূর্ন স্থাবর সম্পত্তি। আসামিরা আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন ঘটিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীকার আন্দোলনের প্রতীক শহীদ মিনার ভাঙচুর করে মারাত্মক অপরাধ করেছে, যা দ্রুত বিচার আইনে বিচারযোগ্য।
উল্লেখ্য ঝালকাঠি নতুন চর এলাকার ইলেক্ট্রিশিয়ান মো. নাছির উদ্দিনের স্ত্রী ফতেমা শরীফ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শারমীন মৌসুমি কেকার ক্যাডার হিসেবে বিতর্কিত কর্মকান্ড করে আসছিল। গত ৩০ আগস্ট শহরের পূর্বচাদকাঠি এলাকার বোরহান উদ্দিন খানের দ্বিতীয় স্ত্রী পারভীন আক্তারকে শারীরিক নির্যাতন করে মাথার চুল কেটে দেয় কেকা ও ফতেমা বাহিনী। এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা হলেও হাইকোর্ট থেকে আট সপ্তাহের আগাম জামিন লাভ করে শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছিল ফাতেমা শরীফ। কিন্তু শহীদ মিনার ভাঙচুরের মামলায় পুলিশের খাঁচায় আটকা পড়ে সে।