স্টাফ রিপোর্টার :
নিজের মায়ের বিরুদ্ধে মামলা করে বাল্য বিয়ে ঠেকানো যুক্তরাস্ট্রের উইমেন কারেজ অ্যাওয়াডপ্রাপ্ত ঝালকাঠির সেই শারমিন আক্তারের বাবা কবির হোসেনকে (৪৮) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শারমিনের মায়ের দায়ের করা যৌতুক আইনের মামলায় তাকে রাজাপুর বাঘরি এলাকার ভাড়া বাসা থেকে মঙ্গলবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ বুধবার দুপুরে ঝালকাঠির জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে তাকে হাজির করা হয়। বিচারক বেগম রুবাইয়া আমেনা তাকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
জানাযায়, শারমিনের বাবা কবির হোসেন সৌদি আরবে থাকতেন। গত ৪ মার্চ সে দেশে ফিরে আসেন। রাজাপুর সদরের বাঘরি বাসায় এসে তিনি মেয়ের সঙ্গে মায়ের অমানবিক আচরণের ঘটনায় গত ৭ মার্চ তাঁর স্ত্রী গোলেনূর বেগমকে তালাক নোটিশ পাঠায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গোলেনূর বেগম গত ২২ মার্চ ঝালকাঠির জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে শারমিনের বাবার নামে এক লাখ টাকা যৌতুক দাবির অভিযোগ এনে মামলা করেন। আদালত কবির হোসেনের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। রাজাপুর থানা পুলিশ বাঘরি এলাকার ভাড়া করা বাসা থেকে শারমিনের বাবাকে গ্রেপ্তার করে।
নবম শেণিতে পড়া অবস্থায় ২০১৫ সালের ৬ আগস্ট জোর করে মায়ের কথিত প্রেমিক স্বপন খলিফার সঙ্গে শারমিনকে বাল্য বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। এ ঘটনায় ১৬ আগস্ট রাতে শারমিন আক্তার বাদী হয়ে রাজাপুর থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় শারমিনের মা গোলেনূর বেগম ও বাল্য বিয়েতে আগ্রহী ব্যক্তি স্বপন খলিফাকে আসামী করা হয়। মামলায় গোলেনূর বেগম আদালত থেকে জামিন নিয়ে রাজাপুরের আঙ্গারিয়া গ্রামের বাড়িতে থাকেন।
এদিকে শারমিনের বাল্যবিয়ে ঠেকানোর ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরে তাঁর পাশে এসে দাঁড়ায় বিভিন্ন সংগঠন ও নানা শেণি পেশার মানুষ। স্বর্ণ কিশোরী ফাউন্ডেশন তাঁর লেখা পড়ার দায়িত্ব নেয়। ওই সংগঠন তাকে সম্মাননাও দেয়। নিজের বাল্য বিয়ে ঠেকিয়ে শারমিন শুধু দেশেই নয়, বিদেশে সুনাম অর্জন করেছে। তাঁর সাহসিকতার জন্য বিদেশেও তাকে পুরস্কৃত করা হয়। গত বছরের ৩০ মার্চ তাকে যুক্তরাস্ট্রের পররাস্ট্রমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সাহসী পুরস্কার (সেক্রেটারি অব স্টেটস ইন্টারন্যাশনাল উইমেন কারেজ অ্যাওয়ার্ড) দেওয়া হয়। মাত্র ১৫ বছর বয়সে দক্ষিণ এশিয়ার কিশোরীদের জন্য দৃষ্টান্ত তৈরি করায় শারমিনকে এ পুরস্কার তুলে দেন যুক্তরাস্ট্রের ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প। শারমিন গত বছর এসএসপি পরীক্ষায় ঝালকাঠির রাজাপুর পাইলট বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে অংশ নিয়ে এ গ্রেড (জিপিএ ৪.৩২) পেয়ে পাস করে। বর্তমানে সে ঢাকার ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে।
শারমিনের দাদি দেলোয়ারা বেগম বলেন, আমার নাতির শরিমিনের সঙ্গে ওর মা তাঁর প্রেমিকের বিয়ে দিতে চেয়েছিল। এতে ব্যর্থ হয়ে সে আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়। আমার ছেলে (শারমিনের বাবা) দেশে ফিরে এসে পুরো ঘটনা শুনে শারমিনের মাকে তালাক দেয়। তালাকের খবর শুনে আমার ছেলের বিরুদ্ধে মিথ্যে একটি মামলা করা হয়েছে।
শারমিন জানায়, আমার বাবা একজন ভাল মানুষ। দেশে আসার পর থেকে বাবার বিরুদ্ধে আমার মা ষড়যন্ত্র করছে। আমার সঙ্গে অমানবিক কাজের কথা শুনে মাকে তালাক দিয়েছেন বাবা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মা মিথ্যা একটি যৌতুক মামলা করেছেন। ২০১৫ সালে ঘটনার সময় আমার বাবা বিদেশে (সৌদি) ছিলেন।