ডেস্ক রিপোর্ট : স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরাতন কারাগারে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। শনিবার দুপুর দেড়টায় শাহবাগের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে তাকে নিয়ে কারাগারের উদ্দেশে রওনা করে কারা কর্তৃপক্ষের গাড়ি বহর। দুপুর ২টায় খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়ি পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটকে পৌঁছায়। এর আগে তাকে বিএসএমএমইউর রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগের ১/এ নম্বর কক্ষে নিয়ে এক্সরে করানো হয়।
এরপর সাবেক প্রধানমন্ত্রী হেটে গাড়িতে ওঠেন। কড়া নিরাপত্তায় তাকে নিয়ে কারাগারের পথে রওনা দেন কারারক্ষী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় গাড়িবহরে একটি অ্যাম্বুলেন্স, দুটি গাড়ি ছিল। এর সামনে পেছনে র্যাবের পাহারা ছিল। বেলা ১১টা ২০ মিনিটের দিকে খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে বিএসএমএমইউতে আনা হয়। সেখানে পৌঁছানোর পর তাকে প্রথমে নেয়া হয় হাসপাতালের কেবিন ব্লকে। ৫১২ নম্বর কেবিনে কিছুক্ষণ রাখার পর কেবিন ব্লকের প্যাথলজি বিভাগে রক্ত পরীক্ষা করা হয়। রক্ত পরীক্ষা শেষে বিএনপি নেত্রীকে এক্সরে করতে নেয়া হয়।
জানা গেছে, চিকিৎসার জন্য গঠিত চার সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে রক্ত পরীক্ষা ও এক্সরের জন্য খালেদা জিয়ারকে কারাগার থেকে বিএসএমএমইউতে আনা হয়। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। এরপর থেকে গত দুই মাসে ধরে তিনি পুরনো কারাগারে রয়েছেন। কারাগারে ৭৩ বছরের বিএনপি নেত্রীর শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে ঢাকা মেডিকেল কলেজের অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. শামসুজ্জামান শাহীনের নেতৃত্বে চার সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন ডা. মনসুর হাবীব (নিউরোলজি), টিটু মিয়া (মেডিসিন) ও সোহেলী রহমান (ফিজিক্যাল মেডিসিন)। গত ৪ এপ্রিল মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক ড. শামসুজ্জামান শাহীন জানান, আগের সমস্যাগুলোর পাশাপাশি খালেদা জিয়ার নতুন কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। আপাতত তার রক্ত পরীক্ষার পাশপাশি দুই হাঁটুতে এক্সরে করাতে হবে। পরীক্ষার পরই বোঝা যাবে তার অসুস্থতা গুরুতর কিনা। এরপরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে।
ডা. শাহীন বলেন, খালেদা জিয়ার দুই হাঁটু প্রতিস্থাপন করা। তার হাঁটুতে এখন যে ব্যথা তা বয়স থেকে হতে পারে। আগের অপারেশনের জেরে হতে পারে, আবার নতুন হতে পারে। তার কোমর ও ঘাড়ে বড় ধরনের কোনো সমস্যা আছে কিনা তা জানতে সিটিস্ক্যান বা এমআরআই করানো লাগতে পারে। তার ব্যথা কেবল শিনশিন-ঝিনঝিনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নাকি হাড় পর্যন্ত পৌঁছেছে তা জানতে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন। জানা গেছে, শনিবার খালেদা জিয়ার রক্ত পরীক্ষা ও এক্সরের প্রতিবেদন পাওয়ার পর মেডিকেল বোর্ড তার পরবর্তী চিকিৎসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে কোকোর স্ত্রী :
খালেদা জিয়াকে দেখতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) গেছেন তাঁর ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসনকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কের কারাগার থেকে বিএসএমএমইউতে হাসপাতালে নেয়া হয়। এর আধা ঘণ্টা পর দুই মেয়েকে নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন শর্মিলা। তারা গাড়ি থেকে নেমে কেবিন ব্লকে ঢুকতে চাইলে পুলিশ তাদের আটকে দেয়। এরপর হাসপাতাল প্রাঙ্গণে গাড়ির ভেতরেই কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেন তাঁরা। তখন তাদের ঘিরে জটলা করে ছিল জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের একদল নেতাকর্মী। সেখানে স্লোগান দেয়ার সময় চার-পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ। এরমধ্যে হাসপাতালের পরিচালকের কক্ষে ঢোকেন কোকোর স্ত্রী-সন্তানরা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের স্ত্রী মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাসকেও পুলিশ ফটকে আটকে দেয়। তবে বিএনপি নেতা ও খালেদার দুই আইনজীবী মাহবুবউদ্দিন খোকন ও সানাউল্লাহ মিয়া বিএসএমএমইউতে ঢুকতে পেরেছেন।
(সূত্র : যুগান্তর)