Latest News
বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪ ।। ১৫ই কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Home / জাতীয় / কবুতর চুরির অভিযোগে দুই কিশোরকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন

কবুতর চুরির অভিযোগে দুই কিশোরকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন

স্টাফ রিপোর্টার :  ঝালকাঠির নলছিটিতে কবুতর চুরির অভিযোগে দুই শিশুকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে এক কিশোরের মাথার চুল কেটে দিয়ে অমানবিক আচরণ করা হয়। স্থানীয় ইউপি সদস্য ও যুবলীগ নেতা রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে কয়েকজন যুবক রবিবার বিকেলে উপজেলার সিদ্ধকাঠি ইউনিয়নের চৌদ্দবুড়িয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটায়। নির্যাতন ও চুল কাটার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। নির্যাতনের শিকার সজিব বাকেরগঞ্জের তবিরকাঠি গ্রামের আশ্রাফ আলীর ছেলে এবং জয় একই গ্রামের আবদুল ক্দ্দুসের ছেলে।

জানা যায়, চৌদ্দবুড়িয়া গ্রামের পুলিশ বিভাগে কর্মরত (কনস্টেবল) মো. শাহ আলমের বাড়িতে শনিবার রাতে কবুতর চুরি হয়। রাতেই পার্শ্ববর্তী বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার তবিরকাঠি গ্রামের মো. সজিব (১৫) ও জয় (১৪) নামে দুই কিশোরকে আটক করে স্থানীয় কয়েকজন যুবক। রাত দুইটা থেকে তাদের ১৫ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। পরে সিদ্ধকাঠি ইউনিয়ন পরিষদের নয় নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলামের কাছে দুই শিশুকে নিয়ে যায় স্থানীয়রা।  ইউপি সদস্য তাদের নিয়ে বিচার বসায়। ওই কিশোরদের একটি গাছের সঙ্গে শিকল দিয়ে বেঁধে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে নির্মম নির্যাতন করা হয়। তাদের কাছ থেকে কবুতর চুরির স্বীকারোক্তি নেয় ইউপি সদস্য। দুই কিশোর কবুতর চুরির ঘটনা স্বীকার করলে তাদের মাথার চুল কেটে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ইউপি সদস্য। বয়স্ক এক ব্যক্তি ব্লেড দিয়ে জয় নামে এক শিশুর মাথার মাঝখান থেকে চুল কেটে দেয়। তাদের ২০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়। পুরো ঘটনা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেন স্থানীয় লোকজন। চুল কাটা ও গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের চিত্র ভিডিও করে এবং ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি জানান, চৌদ্দবুড়িয়া গ্রামের খালের ওপার হচ্ছে বাকেরগঞ্জ উপজেলার তবিরকাঠি গ্রাম। ওই গ্রামের দুই শিশু সজিব ও জয় বাখরকাঠি গ্রামের একটি ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করে। কবুতর চুরির অভিযোগে তাদের আটক করে পরিবারের কাছে তুলে না দিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে বিচার করেছেন। শিশুদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হয়। তাদের মাথার চুল কেটে দেওয়া হয়েছে। গাছের সঙ্গে শিকল দিয়ে বেঁধে লাঠি দিয়ে পিটিয়েছে কয়েকজন যুবক।

নির্যাতনের শিকার জয় জানায়, আমাদের রাত থেকে পরের দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত আটকে রাখা হয়। কোন কিছু খেতে দেওয়া হয়নি। দফায় দফায় মারধর করেছে। যারা মেরেছে, আমরা তাদের চিনি না। বিকেলে সালিশ মীমাংসার কথা বলে গাছের সঙ্গে শিকল দিয়ে বেঁধে মেরেছে। চুল কেটে দিয়েছে। আমার বাবা এসে আমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে গেছে।

জয়ের বাবা আবদুল কুদ্দুস বলেন, আমার ছেলের নামে কবুতর চুরির অপবাদ দিয়ে তাকে মারধর করে চুল কেটে দিয়েছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই। জরিমানার টাকা দুইদিনের মধ্যে পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। আমি টাকা দিয়ে ছেলেকে ছাড়িয়ে এনেছি। আমার ছেলের ছবি ফেসবুকে দিয়েছে। অনেকে ফোন করে আমার কাছে ঘটনা জানতে চায়। আমি বিষয়টি নিয়ে লজ্জায় পড়েছি। আমরা গরিব বলে আমাদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হবে, এর কোন বিচার হবে না।

ঝালকাঠির শিশু সংগঠক কাজী খলিলুর রহমান বলেন, শিশুদের গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর এবং চুল কেটে দেওয়ার একটি ভিডিও দেখেছে। এটা অমানবিক। যারাই করেছে, তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার করা প্রয়োজন, যাতে এ ধরণের ঘটনা আর না ঘটে।

সিদ্ধকাঠি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও যুবলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, ছেলে দুটি আমাদের গ্রামে এসে কবুতর চুরি করেছে। আগেও কয়েকজনের বাসা থেকে কবুতর নিয়ে গেছে। সবকিছু তারা নিজেরাই স্বীকার করেছে। আমি তাদের আটকও করিনি, মারধরও করিনি, চুলও কাটিনি। স্থানীয় লোকজন এ কাজগুলো করেছে। এটা ভালো হয়েছে, না খারাপ হয়েছে; সেটা তারাই ভালো জানেন। আমি কোন বিচার ব্যবস্থাও করিনি।

সিদ্ধকাঠি ইউপি চেয়ারম্যান কাজী জেসমিন ওবায়েদ বলেন, আমার একমাত্র মেয়ের আকদ অনুষ্ঠান ছিল বরিশালে, আমি সেখানে ব্যস্ত ছিলাম। তবে বিষয়টি অল্প অল্প শুনেছি। মেম্বারেও আমার কাছে কিছু বলেনি। আমি সরেজমিন গিয়ে বিষয়টি দেখবো।

নলছিটি থানার ওসি মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বিষয়টি ইউপি সদস্যর কাছ থেকে শুনেছি। কবুতর চুরির সময় হাতে নাতে দুই শিশুকে আটক করে আবার ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে চুল কেটেছে কিনা, এটা খবর নিয়ে জানবো। কোন অপরাধ হয়ে থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।